ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

কর্মসৃজন প্রকল্প: বেশিরভাগ শ্রমিকই থাকেন অনুপস্থিত

এইচ এম নাঈম হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
কর্মসৃজন প্রকল্প: বেশিরভাগ শ্রমিকই থাকেন অনুপস্থিত

ঝালকাঠি: ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নে দু’টি গ্রুপে চলছে সরকারের হতদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ। এ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

 

একটি গ্রুপে ৩৯ জন সদস্য থাকলেও কাজ করছেন ১৫ জন। আরেক গ্রুপে ৩৫ জন সদস্যের মধ্যে কাজ করছেন নয়জন।  

শুধু বিনয়কাঠিতেই নয়, ঝালকাঠি জেলার ৩২টি ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে ৯১ গ্রুপে ২৯৪৩ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। বাস্তবে এক চতুর্থাংশ শ্রমিক মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। বাকিদের মধ্যে অর্ধেকই থাকেন অনুপস্থিত আর কেউ কেউ এসে শুধু হাজিরা দিয়ে চলে যান।  

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিনয়কাঠি ইউনিয়নের মানপাশা-বিনয়কাঠি সড়কের কানাই মার্কেট থেকে জালালকাঠি বাজারের সংযোগ সড়কে কাঁচা রাস্তায় মাটির কাজ করছেন ১৫ জন শ্রমিক। তাদের বেশিরভাগই ৪০ বছরের বেশি বয়সী এবং যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ শারীরিকভাবে দুর্বল এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী।  

শ্রমিকদের সর্দার আইয়ুব আলী মীর জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে আমাদের লোক দেন। আমাদের এখানে ২০ জন পর্যন্ত শ্রমিক দিয়েছেন। এখন (বুধবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিট) পর্যন্ত আমাদের কাছে ১৫ জন এসেছেন। সবাই কাজ করছেন।

অপর গ্রুপের গাববাড়ি এলাকায় কর্মসৃজন সদস্য বৃদ্ধা রিজিয়া বেগম জানান, প্রতিদিন তাদের সঙ্গে ১৪ জন/১৫ জন করে কাজে আসেন। বুধবার সকালে ১২ জন এলেও তিনজন অসুস্থতার কথা বলে চলে গেছেন। শ্রমিক সর্দার অশোকও অসুস্থতার কথা বলে চলে গেছেন। এখন তারা নয়জন কাজ করছেন।  

কাজের তদারকির দায়িত্বপালনকারী উপজেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মোকাদ্দেস হোসেন রাসেল জানান, কানাই মার্কেট এলাকায় ৩৯ জন সদস্য খাতাকলমে নিয়োজিত থাকলেও মূলত কাজ করছেন ১৫ জন এবং গাববাড়ি এলাকায় ৩৫ জনের মধ্যে ১২ জন হাজিরা দিলেও কাজ করছেন নয়জন। মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনকালে বুধবার দুপুরে এমনটাই দেখা গেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ওই দিন দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে নিজের অফিসের মধ্যেই সিগারেট ফুঁকছিলেন। এসময় প্রতিবেদককে দেখে বসতে বলে তিনি ওয়াশ রুমে যান। বের হয়ে এ বিষয়ে তিনি বলেন, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৪টি গ্রুপে ৫৭৪ জন সদস্য কর্মসৃজন প্রকল্পে নিবন্ধিত আছেন। প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর ও মোবাইল নম্বর ঢাকা অফিসে দেওয়া আছে। প্রত্যেক সদস্যের অনুকূলে এনআইডি ও মোবাইল ফোন নম্বরের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন চেক করে প্রত্যেকের স্ব স্ব মোবাইল নম্বরে টাকা যাবে। এক্ষেত্রে কারো নম্বর ডাবল হলে অথবা কোনো ত্রুটি থাকলে তারা টাকা পাবেন না। আর কাজ না করে কেউ টাকা তুলবেন, তাও সম্ভব না। কারণ কাজের রিপোর্ট অনুযায়ী তারা মোবাইলে ব্যালেন্স (টাকা) পাবেন।  

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পে ঝালকাঠি জেলার ৩২টি ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে ৯১ গ্রুপে ২৯৪৩ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ গ্রুপে ৫৭৪ জন সদস্য, নলছিটি উপজেলায় ৪৩ গ্রুপে ১৪৬৫ জন সদস্য, রাজাপুর উপজেলায় ১৮ গ্রুপে ৫৩৩ সদস্য ও কাঠালিয়া উপজেলায় ছয় গ্রুপে ৩৭১ জন সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের বেশি বয়স হতে হবে। প্রতিদিনের হাজিরায় তারা পাবেন ৪০০ টাকা করে মজুরি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।