ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্রীকে উত্যক্ত, সালিশে বখাটেকে জুতাপেটায় ঘটনা চাপা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
ছাত্রীকে উত্যক্ত, সালিশে বখাটেকে জুতাপেটায় ঘটনা চাপা

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক স্কুলছাত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ভুক্তভোগীর পরিবারের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করতে দেয়নি গ্রাম্য মাতবররা। একপর্যায়ে উচিৎপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনসহ কতিপয় মাতবরের চাপের মুখে শিক্ষার্থীর পরিবারকে বাধ্য করে সোমবার (১৪ মার্চ) রাতে প্রহসনের সালিশ বৈঠকে অভিযুক্ত বখাটেকে জুতাপেটা করা হয়েছে।

গ্রাম্য মাতবরদের প্রহসনের সালিশ বৈঠক নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুরে ওই ছাত্রীর বাবা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়ে উপজেলার আতাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্যক্ত করে আসছিল পার্শ্ববর্তী দাসিরদিয়া গ্রামের বখাটে ইমরান। একপর্যায়ে রোববার (১৩ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে তার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পিছু নেয় ইমরান ও তার সহযোগী। এ সময় তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে থাকে। পরে মেয়েটির বাড়ির সামনে পর্যন্ত চলে আসে বখাটে ও তার সহযোগীরা। এর প্রতিবাদ করলে তার ভাতিজা আরমানের ওপর হামলা চালায় ইমরান ও তার সহযোগীরা। তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে দেখে তার পরিবারের লোকজন এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় তিনি সোমবার দুপুরে তিনজনের নামোল্লেখ করে পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

ওই ছাত্রীর বাবা আরও জানান, অভিযোগে দায়েরের বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় মাতবররা বিচার সালিশ করে দেওয়ার কথা বলে চাপপ্রয়োগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মাতবরদের চাপে সোমবার রাতে উচিৎপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে প্রহসনের সালিশ বৈঠক হয়। বিচার রাত ৭টায় শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।  
সালিশ বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উচিৎপুরা ইউনিয়নের সদস্য আলমগীর, সাবেক সদস্য শাহ আলমসহ অন্যান্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সালিশে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে বখাটে ছেলেটির এক আত্মীয় বৈঠকে ইমরানকে অভিযুক্ত করে জুতাপেটা করেন।

এদিকে ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন সালিশ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তাছাড়া ও গ্রামের অন্য মাতাব্বররা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন জানান, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। এই কথা বলে তিনি মোবাইলের ফোনকল কেটে দেন। এরপর বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, ভুক্তভোগী পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। থানা থেকে একজন অফিসারকে এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহারে বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিতে হয় বিধায় তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা দেয়নি।

তিনি আরও জানান, সালিশের বিষয় তার জানা নেই। তারপরও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২২
এমআরপি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।