ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কাল থেকে ওড়াকান্দিতে স্নানউৎসব ও বারুণী মেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
কাল থেকে ওড়াকান্দিতে স্নানউৎসব ও বারুণী মেলা

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্নানউৎসব ও ৩ তিনব্যাপী মহাবারুণী মেলা। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে হাজার হাজার মতুয়া ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন।

ঠাকুর বাড়ি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১টায় হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরী ও স্নানোৎসব কমিটির সভাপতি দেবব্রত ঠাকুর বাপ্পীসহ ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা কামনা সাগরে স্নান করে এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন। পরে ভক্তরা কামনা ও বাসনা সাগরে স্নান করবেন। স্নানোৎসব চলবে পরের দিন বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত। আর মেলা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

জানা যায়, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রতি বছর ওড়াকান্দিতে এ স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১তম আর্বিভাব উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উৎসবকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখ মতুয়া ভক্তের আগমন ঘটবে ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িতে।

স্নানোৎসবে যোগ দিতে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মতুয়াভক্ত ও অনুসারীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে ঠাকুর বাড়িতে সমবেত হয়েছেন। কেউ কেউ ঠাকুর বাড়িতে বিছানা পেতে স্নানের অপেক্ষায় আছেন। কেউ কেউ দোকানপাট পেতে বসেছেন। স্নানোৎসব ঘিরে ঠাকুর বাড়ির পাশ ঘেঁষে ৬০ একর জায়গা জুড়ে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় কাঠ, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরি জিনিসপত্র ও খেলনা সামগ্রী, তালপাখা, চানাচুর, মিষ্টি দোকান, হোটেল বসেছে।  

এ উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ঠাকুর বাড়ি এলাকায় বসানো হয়েছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ চৌকি ও সিসি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি মতুয়া সংঘের ২ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবককর্মী দায়িত্ব পালন করছেন।  

স্নানোৎসব ও মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু সরকার বাংলানিউজকে জানান, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আর্বিভাব উৎসব উদযাপন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বছর ভক্তদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, প্রস্রাব-পায়খানা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখাসহ স্নান করে নারীদের কাপড় পাল্টানোসহ সকল ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

তিনি আরো জানান, করোনার কারণে পর পর দু’বছর স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা বন্ধ থাকায় এবার বেশি লোকের আগমন ঘটবে বলে আশা করছি। অন্যবারের চেয়ে এবার কয়েক লাখ বেশি মানুষের আগমন ঘটতে পারে। বিশ্বের অন্তত ১০টি দেশ থেকে মতুয়াভক্তরা এ স্নানোৎসবে যোগদান করবেন।  

কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ রায়হান বাংলানিউজকে জানান, স্নানোৎসবকে ঘিরে নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে পোষাকে ও সাদা পোষাকে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
 
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দ্র নাথ রায় বাংলানিউজকে জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ঠাকুর বাড়ির আগতরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করতে পারেন সেজন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একধিক বার আইনশৃঙ্খলা সভা করা হয়েছে। ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি ও আশেপাশের এলাকায় কয়েকশত পুলিশ পোষাকে ও সাদা পোষাকে থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষা করতে। এছাড়া ঠাকুরবাড়ি স্বেচ্ছাসেবীরাও দায়িত্ব পালন করবে।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, স্নানোৎসবে আগত পূর্ণার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে ওড়াকান্দি একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবাও চালু থা্কবে।
 
গত দুই বছর করোনার কারণে স্নানোৎসব স্থগিত ছিল। তবে গত বছরের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শনে আসেন। সেখানে তিনি হরিমন্দিরে পূজা-অর্চনা করেন ও ঠাকুর বাড়ির সদস্য এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। এতে ঠাকুরবাড়ী বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি পায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।