ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দেওয়া হলো না রাফির

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দেওয়া হলো না রাফির

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: পুলিশের চাকরির জন্য ঘর থেকে মা-বাবার দোয়া নিয়ে বের হয়েছেন রাফি ভূঁইয়া। বাড়ির পাশেই একটি দোকানে গিয়ে ফেক্সিলোড করেন।

 

হঠাৎ ধর ধর শব্দ শুনে দোকান থেকে বের হয়ে দেখতে পান এক যুবক ছুরি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। তিনি ওই যুবকের গতিরোধ করে হাতে ছুরি থাকার কারণ জানতে চান। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রদীপ (২০) নামে ওই যুবক রাফির বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দোকানের পাশেই হুমড়ি খেয়ে বসে পড়েন রাফি। এ সময় আশপাশের মানুষ ও পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  

এ খবর শুনে মুহূর্তেই যেন দুঃখের পাহাড় ভেঙে পড়ে একমাত্র ছেলে হারানো বাবা-মায়ের ওপর। যে স্বপ্ন পূরণে দোয়া নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল রাফি তা এক মুহূর্তেই নিঃশেষ করে দিল বখাটে যুবক প্রদীপের সেই ছুরির আঘাত। খবরটি ছড়িয়ে পড়া মাত্রই হাসপাতাল অঙ্গনসহ এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ছেলের দুঃখে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা।  

মূলত ইভটিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল রাফি ও জিসানের বিরোধের কারণে প্রাণ যায় রাফির।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কিছু দিন আগে স্থানীয় একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে একই এলাকার জিসানের বিরুদ্ধে আল রাফির বোনকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ওঠে। জিসানকে দেখে নিতে আল রাফি তার বন্ধু প্রদীপকে ও শিমুলকে সঙ্গে নেয়। পরে তারা জিসানকে নানাভাবে হুমকি দেয়।  

বিষয়টি সমাধানে আল রাফি ও জিসানের পক্ষের বন্ধুরা সোমবার সন্ধ্যায় আহমদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে জড়ো হয়। এ সময় বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রদীপ ছুরি বের করে সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। পরে উপস্থিত জিসানের বন্ধুরা প্রদীপকে ধরার জন্য ধাওয়া করে প্রদীপ পালানোর সময় রাফি ভূঁইয়া তার গতিরোধ করলে তার বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এসময় প্রদীপ বলে সে যাকে সামনে পাবে তাকে আঘাত করবে।  

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিহতের বাড়িতে ভিড় করছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। আবার বিলাপ করে ছেলে হত্যার বিচার চাইছেন।

নিহতের পরিবারের লোকজন জানায়, পুলিশের কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে যাচাই বাছাইয়ের পর লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল রাফির। কিন্তু শুরু না হতেই সব শেষ হয়ে গেল। তার অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার স্বজন ও এলাকাবাসী।  

নিহতের ফুফু ইমা রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভাইপো এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। গতকাল বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে তার খালার বাসা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার কথা ছিল। পথের মধ্যে দুই যুবকের ইভটিজিংয়ের জেরে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হলো। সে অত্যন্ত সৎ ও ভাল ছেলে ছিল। এলাকায় কখনও কারো সঙ্গে উচ্চবাক্য করেনি।

নিহতের বাবা নিয়ামুল ভূঁইয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে কোনো দোষ করেনি। আমার নিরঅপরাধ বুকের ধনরে একেবারে চিরকালের জন্য শেষ করে দিছে। আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমি ফাঁসি চাই তাদের।

নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মূল হোতা মো. প্রদীপকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলছে। এর নেপথ্যে কেউ আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের কনস্টেবল পদে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল রাফি। আজ তার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল।

** যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় হত্যা: মূলহোতা গ্রেফতার
** ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।