ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

পূর্ণাঙ্গ পৌরসভা হওয়ার আগেই দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
পূর্ণাঙ্গ পৌরসভা হওয়ার আগেই দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

সিরাজগঞ্জ: ৫ বছর আগে পৌরসভা গঠিত হলেও এখনও হয়নি নির্বাচন। নেই কোনো ভবন, প্রশাসক দিয়ে চলছে কার্যক্রম।

অথচ পূর্ণাঙ্গ পৌরসভায় রূপ নেওয়ার আগেই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌরসভার বিরুদ্ধে।  

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিরাজগঞ্জ-পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিএডি মোস্তাফিজুর রহমান তাড়াশ পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত করেন।  

জানা যায়, তাড়াশ উপজেলা সদরের অধিকাংশ এবং বারুহাস ও মাধাইনগর ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে তাড়াশ পৌরসভা ঘোষণা দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। সীমানা জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত নির্বাচন না হওয়ায় পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পৌরসভার কার্যক্রম শুরুর ৫ বছরেও ভবন নির্মাণ হয়নি। উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে চলছে কার্যক্রম।  
 
পৌরবাসীদের অভিযোগ, তাড়াশ নামেই পৌরসভা। কিন্তু কোনো প্রকার নাগরিক সেবা সেখান থেকে পাচ্ছেন না তারা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পৌরসভায় উন্নীত হওয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেবা দেন পৌরসভায়, আর বেতন নেন ইউপি থেকে। পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে তাদের মনেও রয়েছে নানা ক্ষোভ ও হতাশা।

তাড়াশ সদরের দন্ত চিকিৎসক মফিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পৌরসভা হলেও তাড়াশে সবকিছু চলছে আগের মতোই। বাড়তি কোনো সেবা নেই। পৌর এলাকায় চলাচলকৃত যানবাহন থেকে টোল আদায় এবং ট্রেড লাইন্সেস দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।  

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক প্রভাষক বাংলানিউজকে বলেন, নতুন পৌরসভার নাগরিকরা কোনো সুবিধা না পেলেও বাজেট বরাদ্দ যা হচ্ছে তা কর্তৃপক্ষই গিলে খাচ্ছে। আমরা দৃশ্যমান কোনো পৌর সুবিধা পাচ্ছি না।  

তাড়াশ সদর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আতিকুল ইসলাম বকুল বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভার সচিব একাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। পৌরসভার বাজেটে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয় না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো সভা করলেও জনপ্রতিনিধিদের মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় না। সচিবের পছন্দের লোকদের দিয়ে টিআরসহ অন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে নয়-ছয় হলেও দেখার কেউ নেই।

তাড়াশ সদর ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উল্লাপাড়া সরকারি কলেজে ছাত্রদল থেকে নির্বাচিত সাবেক ভিপি আশরাফুল ইসলাম ভূইয়া তাড়াশ পৌরসভা গঠনের পর থেকে পৌর সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। পৌরসভা চলে তার একক নির্দেশনায়। আমাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাড়াশ পৌরসভার সচিব আশরাফুল ইসলাম ভূইয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সবকিছু স্বচ্ছভাবে করছি। কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।  কিছু খারাপ লোক হয়তো দুদকে অভিযোগ দিয়েছে। দুদকের টিম প্রকৌশল শাখার মাধ্যমে নির্মিত রাস্তা-ঘাট, পিআইও শাখার প্রকল্প সমূহসহ ২১টি প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন এবং এসব প্রকল্পের নথিপত্র নিয়ে গেছেন।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মেজবাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, তাড়াশ পৌরসভার বেশকিছু উন্নয়ন কার্যক্রম টিআর প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই টেন্ডার করা হয়নি। দুদক টিম কিছু কার্যক্রম দেখার জন্য এসেছিল। তারা আমাদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে চলে গেছেন।

দুদক সিরাজগঞ্জ-পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিএডি মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তাড়াশ পৌরসভার বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করেছি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার বিধান থাকায় ইতোমধ্যে ঢাকা অফিসে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হননি এই দুদক কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।