ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কেন্দ্র অনুমোদনের খরচ তুলতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২২
কেন্দ্র অনুমোদনের খরচ তুলতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অনুমোদনের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, কেন্দ্র অনুমোদনের খরচ হিসেবে পরীক্ষার্থী প্রতি দুই হাজার টাকা করে ধার্য করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা।

অভিযোগ উঠেছে, অনুমোদনের টাকা পরিশোধে বাধ্য করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ‘টাকা না দিলে পরীক্ষার সময় বুঝিয়ে দেওয়া হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।

গত ২২ মে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক চিঠির তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনার জন্য মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন কেন্দ্র অনুমোদিত হয়।

চিঠিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ২৯ মে’র মধ্যে কেন্দ্র স্থাপন ফি বাবদ ১৫ হাজার টাকা ডিডি বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড সচিবের অনুকূলে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ১১৬জন। জনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হলে মোট ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা আদায় হওয়ার কথা। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদন করতে নানা খরচ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছে, স্কুলে পরীক্ষা কেন্দ্র আনা হচ্ছে। তার অনুমোদনের জন্য শিক্ষকরা টাকা নিচ্ছেন, অভিভাবকদের কাছে এ কথা বলতে বলা হয়েছে তাদের।

তারা আরও জানায়, টাকার কথা বাইরের মানুষের কাছে বলা একদম নিষেধ। কেন্দ্র অনুমোদনে শিক্ষকদের ৬ থেকে সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে, যা তারা নিজেদের পকেট থেকে দিয়েছেন। এ টাকা তুলতে হবে, তাই শিক্ষার্থীদের কাছে প্রথমে তিন হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। কিন্তু তারা যাচাই করে দেখেন, এভাবে সম্ভব না। বিভিন্নভাবে বলার পর শিক্ষার্থীরা দুই হাজার টাকা করে দিতে রাজি হয়। টাকার জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রচুর চাপ দেওয়া হচ্ছে। টাকা দিতেই হবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা বলেন, মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র হবে। স্যাররা বলছেন দুই হাজার টাকা করে লাগবে। তাদের অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। কামাই রোজগার নাই। এখনও স্কুলে দেওয়ার টাকা গোছাতে পারেননি তারা।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র অনুমোদনের টাকা আদায়ের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিজাম উদ্দিন। তার দাবি, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে থাকা বকেয়া টাকা তুলছেন তারা। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা সেন্টারের কিসের টাকা উঠাই? ছেলে মেয়েদের কাছে বকেয়া টাকা থাকে, বছরের টাকা। আমি ক্লাস টিচার, বিভিন্ন টাকা উঠাই। বছরের শুরুতে স্কুলের সেশনের টাকা উঠাই। তারপর পরীক্ষা হলে পরীক্ষার ফি উঠাই। এখন কোনো টাকা উঠাই না। এইতো কিছুদিন আগে ওদের প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা গেছে। সেখানে ৩০০ করে টাকা উঠাইছি। ’

কার নির্দেশে তিনি টাকা তোলেন জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুমোদনেই টাকা তোলেন তিনি।

এ ব্যাপারে মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘কেউ যদি বলে থাকে ঠিক বলেনি। ’ এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একাডেমিক সুপারভাইজার অনাদি কুমার বাহাদুর এ ব্যাপারে বলেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি খোঁজ নিয়েছি, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কোনো টাকা নেননি বলে জানিয়েছেন। কীভাবে, কিসের টাকা নিচ্ছেন- সে ব্যাপারে তাদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আমরা কথা বলব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে, এই কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা. মুজিবুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, আমি খবর নিয়েছি। ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।