ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গোসল নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বস্তিবাসী নারীরা: জরিপ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
গোসল নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বস্তিবাসী নারীরা: জরিপ

ঢাকা: উন্মুক্ত স্থানে গোসলের ফলে অনিরাপত্তায় ভোগেন ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ নিম্ন আয়ের এলাকার কিশোরী ও তরুণীরা। দিনে বা রাতে পানি নিয়ে আসতে অনেক দূরে যাওয়া, টয়লেট ও গোসলখানায় পর্যাপ্ত সুবিধা যেমন দরজার লক, উপরের ছাদ না থাকার কারণে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির ঝুঁকিতে থাকে নারীরা, সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (১১ জুন) ঢাকার একটি কনভেনশন সেণ্টারে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জরিপের ফলাফল তুলে ধরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।

জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ওয়াশ স্পেশালিস্ট এস এম তারিকুজ্জামান। তিনি বলেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এমপাওয়ারিং গার্লস ফর ইকোনমিক অপরচুনিটি অ্যান্ড সেফ স্পেস-ই গ্লস নামে একটি মডেল প্রজেক্ট শুরু করে জানুয়ারিতে। এই প্রজেক্টের আওতায় ঢাকা শহরের চার কলোনি—ধলপুর, মালেক মেম্বার কলোনি, আই জি গেট কলোনি এবং ম্যাচ কলোনিতে ১৫টি গোসলখানা স্থাপনের কাজ করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)। পাশাপাশি আমরা এই চার কলোনির মানুষদের, বিশেষ করে মেয়েদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করি, যেখানে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪১৭ জন মেয়ে উত্তরদাতা হিসেবে ছিলেন এবং ১২টি ফোকাসড দলীয় আলোচনা করা হয়। এই সমীক্ষা এবং তিন মাসব্যাপী সোশাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন করার উদ্দেশ্যে আমাদের সাথে কাজ করেছেন বিওয়াইএস নামক একটি যুব সংগঠন।

কী ধরনের গোসলখানা ব্যবহার করা হয়—জরিপের এমন প্রশ্নের উত্তরে ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, তারা উন্মুক্ত গোসলখানা ব্যবহার করে থাকেন নিত্যদিনের গোসলের কাজে। এই উন্মুক্ত গোসলখানার মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ গোসলখানায় রয়েছে নারীদের জন্য পৃথক জায়গা, অর্থাৎ শুধু নারীরাই সেখানে গোসলের কাজ সারেন। প্রতিটি গোসলখানার বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ জন। সর্বোচ্চ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ এবং সর্বনিম্ন ২০।

উত্তরদাতা নারীদের মধ্যে প্রায় সকলেই ফোকাসড গ্রুপে উল্লেখ করেন, এই গোসলখানাগুলো তাদের জন্য নিরাপদ না। আশেপাশের উঁচু দালানকোঠা থেকে ছবি গ্রহণের মতো ঘটনাও ঘটে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা রাতে টয়লেটে যেতে ভয় পান এবং ৬৮.৬ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী বলেন, তারা টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো না কোনো সময় সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই সমীক্ষাটি করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই যে, এই চার কলোনির টয়লেট বা গোসলখানায় কোথাও স্যানিটারি সামগ্রী নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেই ঠিকমতো। এই অবস্থায় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা বেশ কঠিন।

সহিংসতার কথা বলতে গিয়ে মেয়েরা উল্লেখ করেন, তারা বেশ দূর থেকে পানি আনতে যান এবং ৫৮.৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের অনেক বেশি সময় লাগে ও সন্ধ্যা হয়ে যায় এই কাজটি করতে গিয়ে। ৩৮.২ শতাংশ কিশোরী ও যুব নারীরা বলেছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৯.২ শতাংশ উত্তরদাতারা উল্লেখ করেন, তারা মৌখিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ও ১৩.৪ শতাংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানিক কুমার সাহা জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজারের মতো নিম্ন আয়ের এলাকা রয়েছে। জমির অপ্রতুলতার পাশাপাশি সুয়ারেজ লাইনের চ্যালেঞ্জও এখানে বিদ্যমান। আর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে কিশোরী ও যুব নারীদের ওপর। নিরাপদ গোসলখানার অভাবে পুরুষ ও নারীদের একই সাথে গোসলের কাজ সারতে হয় বলে, গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হয়। সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে। ঢাকার ৪টি কলোনিতে আমরা আমাদের প্রকল্পের আওতায় ১৫টি গোসলখানা নির্মাণ করেছি, যার মধ্যে ২টি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। আমরা আশা করি, নারীরা এগুলো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে কিছুটা হলেও।

পিএসটিসি থেকে প্রকল্প সমন্বয়কারী শিরোপা কুলসুম, একটি গোসলখানায় যখন এতোগুলো মানুষ গোসল করে, তাদের চাহিদা পূরণে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। নারীদের ওপর এর প্রভাব আরও বেশি। বিশেষ করে মাসিকের সময় সংকট হয়ে দাঁড়ায় অভাবনীয়। মাসিক ব্যবস্থাপনা কষ্টকর হওয়ায় তৈরি হচ্ছে তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও। সহিংসতার ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিতেও প্রয়োজন নিরাপদ গোসলখানা।

বিওয়াইএস এর প্রতিষ্ঠাতা ফায়েজ বেলাল বলেন, গোসলখানার নিরাপত্তা কতটা জরুরি তা আমরা অনেকেই বুঝি না। এই প্রকল্পে কাজ করার মধ্য এই উপলব্ধিটি সর্বপ্রথম আমার মধ্যে কাজ করে। একজন কিশোরীর নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।