ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আবেগ অনুরাগের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে শূন্যতা!

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
আবেগ অনুরাগের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে শূন্যতা!

মানিকগঞ্জ: এক সময়ের ব্যস্ততম নৌপথ, যানবাহনের হর্ন ও জনসমাগমে মুখরিত ফেরিঘাট পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর যানবাহনের সেই দীর্ঘ সারি আর অপেক্ষার চিত্র এখন  আর নেই।

পর্যাপ্ত ফেরি আর সেতু উদ্বোধনের ফলে অনেকটাই চাপ কমে আসছে ঘাট এলাকায়, স্বস্তিতে পার হচ্ছে এই নৌপথে চলাচলরত যাত্রী ও যানবাহন।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগের দিন থেকে শুরু করে উদ্বোধনের দিন অন্য সময়ের চেয়ে কিছু যানবাহন বেশি পারাপার হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দিনেই কমে আসছে সেই চাপ, ওই সময়ে উভয় ঘাট দিয়ে ছোট বড় মিলিয়ে পার হয়েছে ৫ হাজার ৩৬৩টি যানবাহন। তৃতীয় দিনে পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে পারাপার হয়েছে ৮ ঘণ্টায় ৭৭৫টি যানবাহন। গত সপ্তাহের ঠিক এই সময় কিছু বেশি সংখ্যক যানবাহন পারপার হয়েছে তবে কয়েকদিন গেলে পুনরায় আগের মতোই যানবাহন পারাপার হবে। আসন্ন দুই সপ্তাহে এই নৌরুট দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা আরও কমবে বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধন, মাসেরও শেষ তার মধ্যে আসছে ঈদুল আযহা আর এই তিন মিলিয়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানবাহন ও যাত্রীর সংখা অনেকাংশেই কমে গেছে। আবেগ ও অনুভূতি থেকে স্বপ্নের কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ছুটে চলছে উভয় পারেই। এ কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া উভয় ঘাটেই যানবাহনের চাপ তুলনামূলক কম। বর্ষার ভরা মৌসুমে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে, ফলে আগের চেয়ে নৌপথ পারে দেড়গুন সময় বেশি লাগছে। তবে এ নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই যানবাহন ও যাত্রীরা পার হচ্ছে উত্তাল পদ্মা।  

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও যানবাহনের জন্য পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ৫টি পন্টুনে ১০টি পকেট ও দৌলতদিয়া ঘাটে ৪ পন্টুনে ৯টি পকেট দিয়ে যানবাহন লোড আনলোড হয়ে থাকে। নদীতে পানি থাকায় এখন সব কয়েকটি পকেট সচল রয়েছে। প্রতিটি ফেরি ওই পকেটগুলোতে নোঙর করে যাত্রী ও যানবাহন লোড আনলোডের কাজ করছে। ফলে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে রো রো (বড় ফেরি) ১০টি, ইউটিলিটি ৬টি, কে-টাইপ ২টি এবং ড্রাম ফেরি ৩টি মোট ২১টি ফেরি চলাচল করছে। পদ্মা নদী তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচলে বেশ বেগ পোহাতে হয় ফেরি মাস্টারদের আর এতে করে একে-তো সময় লাগছে বেশি তার মধ্যে আবার কমে যাচ্ছে ফেরি ট্রিপের সংখাও। পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় ঘাট এলাকায় কোনো যানবাহনকেই আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে না। ফেরিঘাট এলাকায় প্রবেশ করেই কাটছে নৌপথ পারের টিকিট তারপর সরাসরি ফেরিতে উঠে যাচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন। যানবাহনে চালক ও যাত্রীরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে নৌপথ পার হতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।

গাবতলী থেকে আসা ফরিদপুরগামী যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাবতলী থেকে ফরিদপুরের গাড়ি এই পাটুরিয়া নৌরুট হয়েই পার হয়ে থাকে, সেজন্য এ রুট দিয়ে আসা। গত সময়ে যখন আসছিলাম তখন বেশ সময় অপেক্ষা করে ফেরিতে উঠতে হয়েছে, তবে এইবার তার ব্যতিক্রম ঘটলো। ঘাট এলাকায় কোনো যানবাহনের সারি চোখে পড়েনি, ফেরিঘাট এলাকায় আসার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কেটে বাস উঠলো ফেরিতে।  

মাদারীপুরগামী যাত্রীবাহী পরিবহনের চালক রফিক মিয়া বলেন, গাবতলী থেকে যখন যাত্রী নিয়ে রওনা হই তখন মহাসড়কে তেমন যানবাহনের চাপ দেখিনি। ঘাটে আসছি দুপুর ১টার দিকে, ঘাটে আসার পরপর ফেরির টিকিট পেয়ে গেলাম, টিকিট কাটার পর কিছুদূর আগানোর পর দেখি ফেরি অপেক্ষা করছে যানবাহনের জন্য। ঘাটে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় কোনো ভোগান্তি ছাড়াই নৌপথ পার হতে পেরে অনেকটা ভালো লাগছে।  

যশোরগামী সাধারণ পণ্য বোঝাই ট্রাকের চালক সেলিম বলেন, সব সময় দিনের বেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন পার করতো এই নৌরুট দিয়ে, পরিবহনের চাপ কমলে সিরিয়াল অনুযায়ী ট্রাক পার করা হতো। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপর এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমে আসায় ঘাটে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ফেরি পারের জন্য টিকিট কেটে ফেরিতে উঠতে পারলাম। এতদিন দেখেছি যানবাহন ফেরির অপেক্ষায় বসে থাকতো তবে এই বার প্রথম দেখছি ফেরি বসে থাকছে যানবাহনের অপেক্ষায়।

ভাসমান কারখানা মধুমতির  (মেরিন বিভাগ) এজিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের উভয় ঘাটের যাত্রী ও যানবাহনকে পার হতে গেলে পদ্মা নদী পার হতে হয়, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচলে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে ফেরির মাস্টারদের। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে যেতে হয় ফেরিগুলোকে আর এতে করে এই নৌপথ কিছুটা বড় হয়ে গেছে। নৌপথ বড় হয়ে যাওয়ার এবং নদীতে তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচলে সময় আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবে ঘাটে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না পারাপারে, মাঝে মাঝে দু-একটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে ভাসমান কারখানায় আসছে। যান্ত্রিক ত্রুটির সমাধান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌ-বহরে যোগ দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের কাজে নিয়োজিত হচ্ছে।

পাটুরিয়া ফেরিঘাটের বাণিজ্য বিভাগের এজিএম আব্দুল সালাম বলেন, ঘাটে যানবাহনগুলো এখন স্বাচ্ছন্দ্যে পাটুরিয়া ঘাট পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট বড় মিলিয়ে ২১টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ, যে হারে যানবাহন বাড়ছিল তাতে আমাদের এই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া উভয় ঘাটেই সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো প্রতিনিয়ত। কিছুটা হলেও যানবাহনের চাপ কমবে এবং এখন যে সংখ্যক ফেরি এই নৌরুটে আছে তাতে আমরা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই যানবাহনগুলোকে পারাপার করতে পারবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
 আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।