ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রফতানিমুখী শিল্পায়নে প্রাধান্য দেবে সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২২
আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রফতানিমুখী শিল্পায়নে প্রাধান্য দেবে সরকার

ঢাকা : আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা ও দেশের রফতানি খাতকে বহুমুখী করতে অধিক শিল্পায়নের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

আগামীতে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমদানি কমানো ও রফতানিমুখী শিল্প বাড়ানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।

গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও এর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিজস্ব শিল্পায়নের গুরুত্ব আরও অপরিহার্য করে তুলেছে। পাশাপাশি ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার।

উন্নয়নকে টেকসই করা ও উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত শিল্পায়ন জরুরি বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদনের মাধ্যমে চাহিদা মেটানো ও রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন এবং বিশ্বে নতুন নতুন বাজার তৈরির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন।  

সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, বাংলাদেশ যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করে তা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমদানি করা এসব পণ্যের শিল্প দেশে গড়ে তুলে আমদানি কমানো ও পর্যায়ক্রমে দেশকে আমদানি নির্ভরতা থেকে বের করে আনতে হবে।

এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের নির্ভরযোগ্য ও বড় খাত হচ্ছে গার্মেন্টস। শুধু গার্মেন্টস শিল্পের উপর নির্ভর না করে সম্ভাবনাময় আরও বড় বড় রফতানির খাত তৈরি করতে হবে। রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রফতানিকে বহুমুখীকরণ করতে প্রয়োজনীয় শিল্প গড়ে তোলা এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।

রফতানি ক্ষমতা বাড়ানো ও আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে অধিক শিল্পায়ন এবং উৎপাদনের ফলে আভ্যন্তরীণ বাজারও সম্প্রসারিত হবে, কর্মসংস্থানও বাড়বে। উন্নয়নশীল থেকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই শিল্পায়নের বিষয়টি প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

এক সময় বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশে হিসেবে পরিচিত ছিল। আভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ও রফতানি আয়ের উৎস ছিল কৃষি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং বিশ্ব ব্যবস্থায় শুধু কৃষি উৎপাদনের উপর নির্ভর করে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোল সম্ভব নয়। কারণ, কৃষি খাতের সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি আর বেশি দূর এগুবে না বলে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিল্পকে আরও বেশি গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। এখন পুষ্টি জাতীয় খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পায়ন অবারিত করতে হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান হবে। শিল্প বাড়লে ডোমেস্টিক মার্কেট বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, শুধু গার্মেন্টস পণ্য রফতানির ওপর নির্ভর না রফতানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। রফতানিমুখী আরও শিল্প গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি সেটা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। এর জন্য পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন করতে হবে। আগামী দিনে আমাদের এটি বড় চ্যালেঞ্জ, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। আগামীতেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কৃষির উপরে আর বেশি নির্ভর করা যাবে না। কৃষি খাত আর বেশি সম্প্রসারিতও হবে না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বংলানিউজকে বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট যে শিল্পায়নের দিকে নিবিড় দৃষ্টি দিতে হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রফতানি বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও শিল্পায়নকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের সরকার শিল্পায়নের কাজ শুরু করেছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশকে শিল্প নির্ভর দেশে পরিণত করা হবে।

বাংলাদেশ সময় : ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২২
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।