ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্রলীগের চাপে বরগুনায় মারা পড়ছে শতাধিক গাছ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২২
ছাত্রলীগের চাপে বরগুনায় মারা পড়ছে শতাধিক গাছ

বরগুনা: বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশীরা পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই শহরের প্রধান সড়কের ডিভাইডারে ছোট শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়ে সদ্য বেড়ে ওঠা গাছগুলোর ক্ষতি করছে। ব্যানার লাগাতে গিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে একাধিক গাছের শাখা-প্রশাখা।

সেই সঙ্গে তার দিয়ে বেধে বা পেরেক দিয়ে লাগিয়েও ক্ষতি করা হচ্ছে গাছগুলোর।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিকেলে বরগুনা পৌর এলাকার প্রধান সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গাছে সর্বাধিক ব্যানার লাগানো হয়েছে টাউনহল এলাকায়। সেখানে দেখা যায় তিন থেকে চারটি ব্যানার লাগিয়ে প্রতিটি ছোট ছোট গাছটিকেই ঢেকে ফেলা হয়েছে। এখনও ব্যানার লাগানোর জন্য একাধিক ছাত্রলীগের পদপ্রার্থীর নামসহ কাগজ সাদা কসটেপে মুড়ে দেওয়া হয়েছে গাছগুলোতে। তা দেখে বোঝাই যায় সম্মেলনের আগ মুহূর্তে এসব গাছকে আরও ব্যানার বহন করতে হবে। বর্তমানে লাগানো ব্যানারগুলো ডিভাইডার থেকে প্রায় দুই ফুট বড় হওয়ায় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনে প্রায়ই ধাক্কা লাগছে। ইতোমধ্যেই যানবাহনের ধাক্কা, আর ব্যানারের চাপে হেলে পড়েছে অধিকাংশ গাছ।

ইজিপ প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার সৌন্দর্য বাড়াতে টাউনহল থেকে ক্রোক পর্যন্ত ৩৪ হাজার টাকা ব্যায়ে ৩০০ গাছ লাগানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সাবেক মেয়র শাহাদাত হোসেন। পরবর্তিতে পৌরসভার অর্থায়নে প্রতিটি গাছে ২০১ টাকা করে ৬০ হাজার ৩০০ টাকা খরচ করে বেড়া দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে গাছের বেড়া না থাকায় গাছগুলোও হুমকিতে আছে।

ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম সাগর মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাছের সঙ্গে ব্যানার লাগিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন যুবলীগের সম্মেলনের সময়ও গাছের সঙ্গে ব্যানার লাগানো হয়েছিল। ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী অন্যরা গাছে সঙ্গে ব্যানার লাগিয়েছেন বলে তিনিও ২০টি ব্যানার ডিভাইডারের গাছে লাগিয়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানালে ব্যানার সরিয়ে নেওয়া হবে।

এদিকে ব্যানার লাগালেও গাছের কোনো ক্ষতি হয়নি দাবি করেছেন আরেক সভাপতি প্রার্থী তৌশিকুর রহমান ইমরান। তার মতে এটি রাজনৈতিক রীতিনীতি। এর আগে যুবলীগের সম্মেলনের সময়ও এসব গাছেই ব্যানার লাগানো হয়েছিল। তাই তারাও এখন লাগিয়েছেন। এতে গাছের কোনো ক্ষতি হয় না।

বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সারা বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় ছাত্রলীগের ভূমিকা আমাদের চোখে পড়েছে।   বরগুনার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের শুভেচ্ছা ব্যানার ও ফেস্টুন গাছের সঙ্গে লাগানোর বিষয়টি দৃষ্টিকটু। তাদের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আমতলী, তালতলী সমন্বয়ক আরিফ রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গাছের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কীভাবে করতে পারে। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই। পরিবেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত নেওয়ার দাবি জানাই।

বরগুনা জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি মুশফিক আরিফ জানান, পরিবেশ রক্ষায় গাছগুলো রক্ষা করা জরুরী, তাই পৌর মেয়রকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শও দেন তিনি।

বরগুনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মহারাজ জানান, বরগুনার বাইরে থাকায় তার নজরে আসেনি গাছে ব্যানার লাগানোর বিষয়টি। তিনি বরগুনা গিয়ে পরিস্থিতি দেখে পদক্ষেপ নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ১৫ জুলাই, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।