ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সন্তানের রক্তঝরা ক্যাম্পাসে এসে বিচার চাইলেন মা

নাসির উদ্দিন ও হাসান নাঈম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
সন্তানের রক্তঝরা ক্যাম্পাসে এসে বিচার চাইলেন মা

শাবিপ্রবি, (সিলেট) : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদ নিহত হয়েছেন সাত দিন হলো। রোববার (৩১ জুলাই) ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তার মা ইয়াসমিন বেগম।

সন্তানের রক্তঝরা ক্যাম্পাসে এসে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। ছেলে হারানোর বেদনায় তার অর্তনাদ ও গগণ বিদারী চিৎকার ছুঁয়ে গেছে বুলবুলের শিক্ষক ও সহপাঠীদের। নাড়ী ছেড়া ধনকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চেয়েছেন ইয়াসমিন।

ইয়াসমিনের সঙ্গে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তার আরেক ছেলে মো. জাকারিয়া, তার দুই বোন ও তাদের মামা। শাহপরান হলের অতিথি কক্ষে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান। হলে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন তারা। এ সময় বুলবুলের কক্ষ (২১৮) ঘুরে দেখেন তার মামা। পরে বুলবুলের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, হাতঘড়ি, তোষক, টেবিল ল্যাম্প, কাপড়সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বুঝে নেন ইয়াসমিন বেগম।

সোমবার (২৫ জুলাই) ঘটনার দিন বুলবুল তার যে বান্ধবীর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন, তার সঙ্গেও কথা বলতে চান ইয়াসমিন। কিন্তু মামলার বিষয়টি তদন্তনাধীন বিধার তার সঙ্গে কথা বলা যাবে না বলে জানান এসএমপির জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ দেব। মামলার তদন্ত করছেন তিনি।

জানা গেছে, এ ইয়াসমিন তার ছেলে জাকারিয়া ও তার মামা যখন ক্যাম্পাসে ছিলেন, তাদের অনেকটা নজরবন্দী করে রাখেন শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নিহতের পরিবারকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। বুলবুলের পরিবার ক্যাম্পাস থেকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে ছিলেন।

ক্যাম্পাস ছাড়া আগে শাবিপ্রবির প্রতিবেদকরা বুলবুলের ভাই জাকারিয়ার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। এ সময় বাংলানিউজও তার সঙ্গে কথা বলে। জাকারিয়া জানান, ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় মাকে আটকে রাখা যাচ্ছিল না। বুলবুল হলের যে কক্ষে থাকতো, সেখানে আসতে চাচ্ছিলেন তিনি। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে আসা হয়।

তিনি বলেন, আমরা চার ভাই-বোনের মধ্যে বুলবুল সবার ছোট ছিল। সাত মাস আগে আমাদের বাবা মারা যান। বুলবুলকে এ অবস্থায় পড়াশোনা করাতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তা শেষ করে দিল। আমার মা হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন। আমারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবি করছি।

জাকারিয়া আরও বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যা মামলা তদন্তনাধীন থাকলেও মনে হয় না সুষ্ঠু তদন্ত হবে। কারণ, হত্যাকাণ্ডের যিনি প্রত্যক্ষদর্শী (বুলবুলের বান্ধবী) তার সঙ্গে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তাকে কেন আড়ালে রাখা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সপ্তাহখানেক পরে নাকি মেয়েটির সঙ্গে আমাদের কথা বলিয়ে দেবেন।

আমার ভাই হারিয়েছি। তার অন্তিম সময়ে সেই মেয়েটিই কাছে ছিল। তার কাছ থেকে দুটি কথা শুনতে পারতাম, কী ছিল বুলবুলের শেষ কথা।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই আমার চেয়ে ৫ আঙুল লম্বা ছিল। তার মতো ২-৩ টা ছেলে তাকে মেরে ফেলতে পারে, এটা বোধগম্য নয়। মেয়েটা কিসের জন্য পালিয়েছে, কল লিস্ট মুছে দিয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। ছুরিকাঘাতের পর ১৫ মিনিট রক্তক্ষরণ হয়েছে জেনেছি। ওই এলাকায় অহরহ মানুষ থাকলেও ঘটনার সময় মেয়েটি কী করছিল?

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে তিনি এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এসব তথ্য পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান জাকারিয়া।

বুলবুল ও তার বান্ধবীর সম্পর্কের ব্যাপারে পরিবার জানতো না। এ ছাড়া বুলবুলের হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের অনেকেই প্রাপ্তবয়স্ক নয়। কামরুল নামে যে তরুণ হত্যার কথা স্বীকার করেছে, তিনি নাকি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ অবস্থায় সময় যতো গড়াবে, মামলা হালকা হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও করছেন জাকারিয়া। তাই মামলার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও করেন তিনি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে নিহত বুলবুলের ভাই জানান, তার সঙ্গে (ভিসি) শনিবার ফোনে কথা হয়েছে। তার নরসিংদী যাওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে যেতে পারেননি। মাকে নিয়ে সিলেটে এসেছি বলার পর তিনি ঢাকা যাচ্ছেন বলে জানালেন।

বুলবুলের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি বুলবুল হত্যার ন্যায় বিচার হবে। তদন্তের স্বার্থে আমাদের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা কথা দিচ্ছি এ প্রতিদান দেব।  

বাংলাদেশ সময় : ১৮৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
এনইউ/এইচএন/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।