ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

'ডিবি পুলিশ' পরিচয়ে আর নয় অপরাধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
'ডিবি পুলিশ' পরিচয়ে আর নয় অপরাধ

ঢাকা: রাজধানীর মতিঝিল ১১/২ টয়েন বি সার্কুলার রোড এলাকায় রোববার (৩১ জুলাই) অভিযান চালিয়ে 'ডিবি পুলিশ' পরিচয়ধারী (ভুয়া) ডাকাত দলের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার মতিঝিল বিভাগের একটি টিম।

গ্রেফতার ছয় জন হলেন- ফরিদ উদ্দিন (৫০), মো. পারভেজ (৩৫), সাইফুল ই নাদিম (৩০), শফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৫০), মো. জসিম (৩৪) ও মো. নাছির (৩৮)।



অভিযানে তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ লেখা তিনটি জ্যাকেট, একটি হাতকড়া, একটি লাঠি (স্টেইনলেস স্টিলের), দুটি হোলস্টার, তিনটি খেলনা পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি (খেলনা), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিভিন্ন নামের অ্যাকাউন্টের পাঁচটি চেক বই, একটি মাইক্রোবাস ও 'পুলিশ' লেখা স্টিকার জব্দ করা হয়।

এই চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে ডিবি পুলিশ সেজে অবস্থান করতো। ব্যাংকে টাকা জমা/বা তুলতে আসা গ্রাহকদের টার্গেট করে তাদের অপহরণ করে টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সামগ্রী লুটে নিতো।

রাজধানীসহ সারা দেশেই বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। তবে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সাদা পোশাকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে। এদিকে অপরাধীদের কেউ কেউ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। অনেকেই আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছেন।

সাধারণ ইউনিফর্ম থাকায় প্রতারক ও অপরাধীরা সহজেই এমন ইউনিফর্ম তৈরি করে ভুয়া ডিবি সদস্য সেজে ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণের মতো বড় বড় অপরাধ করে আসছিল। এসব অপকর্মের কথা মাথায় রেখে ডিবির পোশাকের পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এখন 'ডিবি পুলিশ' (ভুয়া) পরিচয় দিয়ে ডিবি পুলিশ লেখা জ্যাকেট ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্ম সংঘটিত করার সুযোগ আর নেই অপরাধীদের। ডিবি পুলিশের পোশাকে লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের সদস্যদের জ্যাকেটে যুক্ত হয়েছে 'কুইক রেসপন্স কোড' বা 'কিউআর কোড'। যা ডিবির প্রতিটি সদস্যকে পৃথক কোড সংযুক্ত করে জ্যাকেট দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ডিবি পুলিশের আগের পোশাক খুব সহজেই নকল করা যেতো। তৈরি করাও যেতো। ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী সদস্যরা খেলনা পিস্তল ও হাতকড়া ব্যবহার করছেন। এতে আসল ডিবি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

ডিবি পুলিশের নতুন পোশাক নকল করা সম্ভব না উল্লেখ করে হারুন অর রশিদ বলেন, শুধু ব্যাংকে নয়, অনেক সময় বাসায় ডিবি পরিচয়ে মানুষজনদের তুলে এনে মুক্তিপণ আদায় করতো ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী সদস্যরা। এ রকম অনেককে আমরা গ্রেফতার করেছি। সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীকে ডিজিটাইজেশন অংশ হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশের পোশাকে কিউআর কোড সংযোজন করা হয়েছে। এতে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ডিবি পুলিশের পোশাকে সংযুক্ত কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে পূর্ণাঙ্গ সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ডিবির কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোডে তিনটি বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো গোপন নাম্বার, গোয়েন্দা পুলিশের মনোগ্রাম ও রঙিন। এছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের নতুন পোশাকে আরও কিছু গোপনীয় ফিচার থাকবে। যা আমরা প্রকাশ করছি না।

ডিবি জানায়, আগে ডিএমপির ডিবি পুলিশ যে জ্যাকেট পরিধান করে অভিযান চালাচ্ছে তা বেশ পুরোনো। দীর্ঘ দিন ধরে এ জ্যাকেট ব্যবহারের ফলে অনেক প্রতারক চক্র বাইরে থেকে এটি তৈরি করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে। অনেক সময় মানুষকে ফাঁদে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় জ্যাকেটটির হুবহু কপি ভুয়া ডিবি সদস্যদের কাছে পাওয়া গেছে।

ভবিষ্যতে কেউকে যেন এভাবে প্রতারণার শিকার হতে না হয় সেজন্য ডিবিতে সংযোজন করা হয়েছে নতুন জ্যাকেট। এ জ্যাকেট নকল করা সম্ভব হবে না।

জ্যাকেটের বৈশিষ্ট্য

ডিএমপি ডিবির নতুন জ্যাকেটে এ প্রথম গোপনীয় নম্বর, গোয়েন্দা বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সমন্বয়ে কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোডের ব্যবস্থা থাকছে। সন্দেহ হলেই যে কেউ ডিবি পোশাকে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে ওই ব্যক্তি ডিবির প্রকৃত সদস্য কিনা তা শনাক্ত করতে পারবেন।

নতুন জ্যাকেটে ডিবি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রঙিন লোগো ব্যবহার করা হয়েছে যা সহজেই দৃশ্যমান।

জ্যাকেটে রাত্রিকালীন আলোতে দূর থেকে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি বোঝা যাবে।

নতুন ডিবি জ্যাকেটে বিভিন্ন পকেটের সুবিধা রয়েছে, অভিযানকালে ডিবি সদস্যরা প্রয়োজনীয় নোটবুক, কলম ও কাগজপত্র নিরাপদে রাখতে পারবে।

গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নতুন জ্যাকেট/পোশাক তৈরিতে এমন কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে যা শীত, গরম উভয়ের ঋতুতেই পড়তে আরামদায়ক। এছাড়া পোশাকে এক ধরনের বিশেষ রং থাকবে যার বিচ্ছুরণ থেকে আসল-নকল পুলিশের পার্থক্য ধরা যাবে। এমনকি বিশেষ ধরনের কাপড় দিয়ে এই পোশাক তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি বাজারে পাওয়া না যায়।

কর্মকর্তারা জানায়, ডিবির সব কর্মকর্তাদের তথ্য আগে থেকেই নিজস্ব সার্ভারে জমা থাকবে। এরপর মোবাইলের অ্যাপ দিয়ে সদস্যের কিউআর কোড স্ক্যান করলেই তাদের পরিচয় চলে আসবে। আর যদি কোনো ভুয়া ডিবির পোশাকের কোড স্ক্যান করা হয় তাহলে ‘ইনভ্যালিড কিউআর কোড’ নামে একটি বার্তা দেখা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।