ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মসজিদ নির্মাণের ব্যানার টাঙিয়ে করা হলো মার্কেট!

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২২
মসজিদ নির্মাণের ব্যানার টাঙিয়ে করা হলো মার্কেট!

কক্সবাজার: এতদিন মানুষ জানতো সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এমনকি মসজিদ নির্মাণ কাজ চলছে বলে একটি ব্যানারও টাঙানো হয়েছে সেখানে।

কিন্তু হঠাৎ করে সেই ব্যানারটি কোথাও উধাও হয়ে গেল।  

আর যে জায়গায় স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়েছে ওই জায়গায় দৃশ্যমান হলো একটি মার্কেট।

কক্সবাজারে প্রশাসনের নাকের ডগায় (পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া) এ অভিনব প্রতারণাটি করেছে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন সাত শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখলে রাখার জন্য  অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এমন কি প্রস্তাবিত এই মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থানীয় বিশিষ্টজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করা মোটা অংকের টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে।

তবে জমির মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, জমি অবৈধ দখলে রাখার ঘটনায় গত বছরের (২০২১) নভেম্বরে কক্সবাজার সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ঘটনাস্থলে গেলে ঘটনার সত্যতা পায়।  

দলটির নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন সবধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ আকারে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি।

গণপূর্ত বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণিতে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন সাত শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমি গত ২০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি। এ বিষয়ে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজার শহরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন কিছু জায়গা বেশকয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে দখলে রেখেছে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি। গত বছরের নভেম্বরে সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করলে বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের নজরে আসে এবং গণপূর্তের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হলে সেখানে মসজিদ নির্মাণের ব্যানার টাঙানো হয় ও পাকা ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখা হয়।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেখানে এক তলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হলে মোটা অংকের সেলামি নিয়ে দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ জানানোর অন্তত সাত মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা প্রশাসন এবং কউক এখন পর্যন্ত সরকারি জমি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও জানান প্রকৌশলী আরিফুর রহমান।

সচেতন মহল ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভবনটির নির্মাণকাজ শুরুর আগে সমিতির উদ্যোগে বিরোধীয় জায়গায় ‘মসজিদ স্থাপনের’ ব্যানার টাঙানো হয়। এমন কি সমিতির দায়িত্বরতরা মসজিদ নির্মাণের নামে স্থানীয় বিশিষ্টজনের কাছ থেকে অনুদানের নগদ টাকাও সংগ্রহ করেন। কিন্তু সরকারি ওই জায়গায় মসজিদের বদলে নির্মাণ করা হয়েছে বাণিজ্যিক বহুতল ভবনের মার্কেট।

স্থানীয় সমাজকর্মী সরওয়ার আলম বলেন, জেলা চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির দায়িত্বরতরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য তার কাছে অনুদান চাইলে তিনি প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি প্রতারণা। মূলত অন্যর জমিতে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের জন্য তারা এ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়টিতে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। প্রস্তাবিত মসজিদ ও মার্কেট নির্মাণের জন্য সমিতির উদ্যোগে সভাপতিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন।  

তবে এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির নেতা আবুল হাশেমের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সেহেতু বিষয়টি আমাদের ওপর বর্তায়। এজন্য আমি নিজে গিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে নিষেধ করেছি। আমি তাদের (কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি জমিটি গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্তর অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের বন্দোবস্তও দেওয়া যাবে না। বন্দোবস্ত পেতে হলে গণপূর্তের লিখিত অনুমতি লাগবে।

তিনি বলেন, গণপূর্ত বিভাগের জমিতে ভবন নির্মাণের বিষয়টি একান্ত গণপূর্ত বিভাগ দায়িত্ব নেবে, জেলা প্রশাসন নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২২
এসবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।