ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টাকার বিনিময়ে স্কুল মাঠে গরু-ছাগলের হাট!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
টাকার বিনিময়ে স্কুল মাঠে গরু-ছাগলের হাট!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনুস স্মরণী স্কুল ও কলেজ মাঠে টাকার বিনিময়ে পশুর হাট বসানোর অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই এমনটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এর আগে জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিষ্ঠানে যেতে সমস্যা হওয়ায় মানববন্ধন ও ক্লাস বর্জনের মতো ঘটনা ঘটেছিল। জলাবদ্ধতার জন্য স্কুলে কুচকাওয়াজ (অ্যাসেম্বলি) ও জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করানো বন্ধ রাখা হয়েছিল।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঙ্গাবাড়ি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল তার নিকট আত্নীয় তাইস উদ্দিনকে প্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানোর মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয় মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসানো হয়। গত বুধবার সকালেও গরু-ছাগলের হাট দেখা গেছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।

এছাড়া বর্ষার সময় প্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে ডুবে থাকে। তার ওপর ভবনের পাশের মাঠের বাকি অংশে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিষযটি নিয়ে তারা গত ১৬ সেপ্টেম্বর মানবন্ধন ও ১৮ সেপ্টেম্বর ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভও করেছেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শাহলাল জানায়, প্রতি বছর বর্ষার সময় স্কুল মাঠে জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়। কর্তৃপক্ষকে বার বার বলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেন না। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন। সমস্যা সমাধান করতে না পারাটা তার ব্যর্থতা। আন্দোলনে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবি করা হয়।

এদিকে নিয়মিত হাট বসানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহকারী ও হাটের তথাকথিত ইজারাদার তাইস উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি বছরে ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অধ্যক্ষে কাছ থেকে পশুর হাটের জন্য ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছি। তবে গত ২ সপ্তাহ থেকে হাট বন্ধ আছে বলে তিনি দাবি করেন।

তবে হাট বন্ধ থাকলেও বুধবার সকালে কিভাবে মাঠে গরু-ছাগল বিক্রি হচ্ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঠে কোনো হাট বসেনি। পশুগুলো সোনাইচন্ডি হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

হাট বসানোর কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্লাশের কোনো ক্ষতি না হলেও দৈনিক সমাবেশ (এ্যাসেমব্লি) ব্যহত হয়। তবে এর জন্য তিনি জলাবদ্ধাতাকে দায়ী করেন।

অন্যদিকে অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল জানান, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাইস উদ্দিনকে প্রতি বছর পাঁচ হাজার টাকার চুক্তিতে হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া আছে। ইজারার টাকা নিয়মিত ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। তবে হাট বসানোর কারণে যে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে এ বিষয়টি তিনি  স্বীকার করেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আর হাট বসানো বা ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। তবে প্রতিষ্ঠানের রাস্তার পাশে পশু ছাড় করার জন্য সোমবার ও বুধবার সকালে সর্ব্বোচ্চ আধা ঘণ্টা কিছু গরু-ছাগল রাখা হয়। আমি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে হাট বন্ধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ইজারাদারের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ূন রেজা বলেন, স্কুল ও কলেজ মাঠে হাট বসানোর বিষয়টি বেআইনি। পশুর হাট বন্ধ করাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে হাটের ইজারাদারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম বাংলানিউজকে জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রশাসনকে জানানোর পর একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই জলাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে। আর পশুর হাটের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটাও বন্ধ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।