এই বাংলাদেশ, এই ভূখণ্ড; এই মাটির পরতে পরতে লেখা আছে তাঁর নাম। ইতিহাসের পাতায় পাতায় জ্বলজ্বল করে স্নিগ্ধতায় বিদ্রোহ বিপ্লবের জয়ডংকায় যে নামটি, তিনি ছিলেন জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত।
ব্যক্তিত্বে, রুচিবোধে, সততা, নিষ্ঠা, জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায়, সৌজন্যে এবং উদারতায় আবদুর রাজ্জাক রাজনীতির জগতে এক অনুপম ও আবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। এক জীবনে দিয়েছেন যা, আদর্শ হয়ে তা চিরজাগরূক। বৃহত্তর পরিধিতে দেশ, সমাজের কথা ভেবেছেন এবং দেশ ও সমাজের উন্নতির জন্য কাজও করেছেন। পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের ব্রত ছিল পুরো জীবনভর। শোষিত, বঞ্চিত মানুষের সুখ-দুঃখ, কল্যাণ এবং মঙ্গলে থেকেছেন পাশে পাশে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থেকেছেন, সাধারণের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা ভেবে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, সামরিক জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে একাগ্রচিত্তে লড়াই করেছেন। চরিত্র, আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড ও আদর্শ সব মিলিয়ে আবদুর রাজ্জাক পরিণত হয়েছিলেন জননেতায়। কর্মী এবং সংগঠক থেকে ক্রমশ: উত্তরণ ঘটিয়েছেন নিজেকে। জনগণের নেতা হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে পেতেছিলেন নিজস্ব আসন। মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থার স্থল ছিলেন। শ্রম, কর্মনিষ্ঠা, কর্মকুশলতা সর্বপরি আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে নিরলস শ্রমের মাধ্যমে নিজেকে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় শুধু নিবেদিত প্রাণ নয়, তার জন্য জেল, জুলুম, নির্যাতন, হুলিয়ার ভেতর দিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে। সাফল্য এসে ধরা দিতে চেয়েছে বারবার তাঁর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে। কিন্তু বাধা এসেও সামনে দাঁড়াতে পিছপা হয়নি। সামরিক জান্তা শাসকরা জেলে আটক শুধু নয়, মানসিক ও শারীরিক পীড়নও করেছে। আর অসুখ বিসুখ দানা বেঁধেছে ক্রমশ সেই থেকে।
ইতিহাসের খেরো খাতায় স্পষ্টাক্ষরে লেখা আছে আবদুর রাজ্জাকের অবদান। রাষ্ট্র ও সমাজে অন্যায়, অনিয়ম, বৈষম্য ও শোষণ তাঁকে প্রতিবাদী হতে প্রেরণা যুগিয়েছে। পাশাপাশি জনমানুষকে সাথে নিয়ে এগিয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকে আবদুর রাজ্জাক স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে যোগ দেন। নিষ্ঠাবান, কর্মকুশল, একাগ্রচিত্ত আবদুর রাজ্জাকের পুরো জীবনটাই কেটেছে সংগ্রামে-আন্দোলনে, কারাগারে, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং দেশ গড়ার মহান ব্রতে। যে আদর্শ নিয়ে স্বাধীন দেশে পথ চলা শুরু করেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে শপথ নিয়েছিলেন, সেই পথে তিনি সংগঠিত করেছিলেন সাংগঠনিকভাবে দলকে। কিন্তু সব রক্ষা হয়নি। দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা খুনির দল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কারাগারে আটকে রাখে টানা ২৭ মাস। কারাগারে থেকেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দীক্ষা তাঁকে দুঃসাহসী করেছিল। নি:শঙ্ক চিত্তে তিনি শত নির্যাতন, শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেছেন। জেলখানায় বসেও দল চালাতেন। তাঁরই নির্দেশে নেয়া হয়েছিল দল পরিচালনার নানা কর্ম পরিকল্পনা।
পঁচাত্তর পরবর্তী যে দুঃসময় গেছে, যে দুর্যোগ ঘটেছে জাতীয় জীবনে, সে সময় রাজপথের প্রতিবাদী মিছিলের বাইরে ছাত্রদের সংগঠিত করতে হয়েছে। আর কারাগার হতে তিনিই তা পরিচালনা করতেন। পঁচাত্তর পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারীরা নানা প্রচেষ্টা চালিয়েও তাদের অনুগত করতে পারে নি। শত নিপীড়নেও তিনি কাবু হন নি।
সুবিধাভোগী বা সুযোগ সন্ধানী হবার অভিলাষের কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেন নি। আমৃত্যু দেখি তাই আদর্শবান, নীতিপরায়ণ, নিষ্ঠাবান হিসেবেই তিনি ছিলেন নিবেদিত। সামরিক জান্তাদের শাসন শোষণ নিপীড়নে যখন কর্মীরা অসহায়, তখন জেল থেকে মুক্ত হয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নেতা হিসেবে, ভাই হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, স্বজন হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে ছিলেন সচেষ্ট। পরশ্রীকাতরতা, প্রতিহিংসা, দ্বেষ, বিদ্বেষ ইত্যাকার কোন কিছুই ষ্পর্শ করতে পারেনি দৃঢ়চেতা আবদুর রাজ্জাককে। মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানোর যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখতেন, আবদুর রাজ্জাক তা বাস্তবায়নে আমৃত্যু সচেষ্ট ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন এবং দেখাতেন। অসাম্প্রদায়িক মুক্তচিন্তার রাজনীতিক হিসেবে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন সাম্প্রদায়িকতাকে।
পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতি ক্ষমতার প্রাসাদ ঘিরে বৃত্তাবদ্ধ হয়েছিল। এই রাজনীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সংঘাত সংক্ষুব্ধ কোলাহলময় পাকিস্তানি চেতনার রাজনীতি উত্তরোত্তর প্রবল হয়েছে। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য মাঠ, রাজপথ দখল করে রেখেছিলেন আবদুর রাজ্জাক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। গঠন করেছিলেন সংগঠন। তাঁর সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাজার কাজ চলছে। যা ছিল তাঁর প্রার্থিত আকাঙ্খা।
আদর্শবাদ, সততা ও মানবতার ধারা বজায় রেখে পথ পাড়ি দিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। স্বচ্ছ ও বলিষ্ঠ চিন্তার অধিকারী ছিলেন। তাই দেখা যেতো, টেলিভিশনের টক’শো বা গোলটেবিল বৈঠকে আলাপচারিতায় তিনি সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের ইচ্ছা, আকাঙ্খা ও আদর্শকে যুক্তিসহকারে বিশ্লেষণ করতেন। আবদুর রাজ্জাক যা বিশ্বাস করতেন; তা প্রকাশে ছিলেন একনিষ্ঠ। কিন্তু কখনোই জেদি বা উত্তেজিত হয়েছেন বলে দেখা যায় নি। যারা তাঁর প্রতিপক্ষ, তার সঙ্গে যাদের মতের মিল হয়নি, তাঁরাও ব্যক্তিগত স্বভাবের মাধুর্যের জন্য তার প্রশংসা করতেন। সব সময় ছিলেন স্মিত হাস্যময়। সকলের কথা শুনতেন মনোযোগে এবং যথাযথ জবাবও দিতেন। সৌম্য-শান্ত মুখে, মার্জিত ভাষায় এবং সৌজন্যবোধের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত চিরায়ত দর্শন ধংসে উদ্যত সামরিক ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতি মূহূর্তে লড়তে হয়েছে একাধারে মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে। অপরদিকে গড়তে হয়েছে সুন্দর এবং কল্যাণের স্বপ্ন নির্ভিক চিত্তে ভবিষ্যতের জন্য। নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন সবার সামনে, প্রথম কাতারে। নির্দেশনা দিতেন সহযোদ্ধাদের লড়াইয়ের ময়দানে। পঁচাত্তরের পর আমাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধে যাঁর উপর নির্ভর করতাম, যাঁর পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা আলোকবর্তিকার মতো আমাদের পথ দেখাতো, তিনি আমাদের পরম ধন আবদুর রাজ্জাক।
বঙ্গবন্ধুর স্নেহছায়ায় যে কয়জন কীর্তিমান স্বাধিকার, স্বাধীনতা আর সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে আমৃত্যু নেতৃত্ব দিয়েছেন, আবদুর রাজ্জাক তাঁদের অন্যতম। মহান এই নেতা অসুস্থ শরীরেও রাজপথে মিছিল, মিটিং সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে জাতীয় দাবিতে পরিণত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ছিলেন শুধু নয়, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ও স্বপ্নপূরণে ছিলেন শীর্ষযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু তাঁকে এতোই বিশ্বাস করতেন যে, বাকশাল গঠনের পর সংগঠনের তিন সেক্রেটারির অন্যতম সেক্রেটারি করেছিলেন আবদুর রাজ্জাককে। অপর দু’জন ছিলেন প্রয়াত জিল্লুর রহমান ও প্রয়াত শেখ ফজলুল হক মণি। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগেরও প্রধানের পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
বলতেনও জননেতা আবদুর রাজ্জাক, “ আমি বঙ্গবন্ধুর একজন শিষ্য, এটাই আমার একমাত্র পরিচয়”। ১৯৬২ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে সারাদেশে জনপ্রিয় করতে সীমাহীন পরিশ্রম করেছিলেন। এজন্য তাকে কারাগারেও যেতে হয়। উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুসহ আবদুর রাজ্জাককে মুক্ত করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। অসম্ভব মেধাবী ও নেতা কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় এই নেতা দু’বার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অসামান্য হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন বলেই সারা বাংলার ছাত্র সমাজের তিনি ছিলেন নয়নমণি।
ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা আবদুর রাজ্জাক। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তার আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সহ-সম্পাদক ছিলেন। শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে জারি হয়েছিল হুঁলিয়া। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৫ সালের একাংশ পর্যন্ত ছিলেন জেলে। ১৯৬৩ হতে ৬৫ পর্যন্ত ছিলেন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক। পুরো জীবন এদেশের কৃষক শ্রমিক শোষিত শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। নানা মত ও পথের অধিকারীরাও সশ্রদ্ধ চিত্তে তাকে সম্মান জানাতেন। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষেরও কন্ঠস্বরে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। জাতিসংঘে গিয়ে নির্যাতিত বিশ্ববাসীর সপক্ষে কথা বলেছেন। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে তাঁর কন্ঠ ছিল সবসময় সোচ্চার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত ও রাশিয়াকে মহান স্বাধীনতার বন্ধু হিসেবে মর্যাদা দিতেন।
দেশের নেতা-কর্মীরা যেমন তাঁকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন, তিনিও তেমনি নেতা-কর্মীদের বুকে টেনে নিতেন। সুখে-দুঃখে সব সময় তাদের পাশে থাকতেন। অসম্ভব সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। পঁচাত্তরে কারাগার জীবনেও ছিলেন সংগঠনকে সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় সচল। ১৯৭৭ সালের শেষ দিকে জেল থেকে বেরুনোর পর থেকে দলকে সংগঠিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তখন তিনি অসুস্থ প্রায়। পিজি হাসপাতালে ছিলেন চিকিৎসাধীন। আর সে সময় সান্নিধ্য পাবার এবং অন্তরঙ্গ হবার সুযোগ ঘটে। এসময় তিনি বিপর্যস্ত ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার পরিকল্পনা নেন। সে অনুযায়ী সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবার পর তারই নির্দেশনায় সারাদেশে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার কাজে ব্যাপৃত হই। সে সময় সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান ছাত্রনেতাদের প্রলোভিত করে তার দলে ভেড়াতে সক্রিয় ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেছিলেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী যেন কোন লোভের কাছে মাথা নত না করে। আদর্শচ্যূত যাতে না হয় কেউ। সেজন্য ‘টীমওয়ার্ক’ চালু করেছিলেন। তারই নির্দেশনায় গতি পেয়ে ছাত্রলীগ সারাদেশে আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনে বিজয়ী হতে থাকে। আর জাতীয় নেতা হিসেবে আবদুর রাজ্জাক নিজের উত্তরণ ঘটাতে থাকেন। রাজনীতির মাঠ কাঁপানো, সারাদেশ চষে বেড়ানো ছিল তাঁর কাজের পরিধি। বঙ্গবন্ধুর মতোই আজীবন নির্লোভ ও সাদামাটা জীবন যাপনই করে গেছেন। ভরাট কন্ঠের তেজ জনসভার শ্রোতার কাছে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠের উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিভাত হতো। জাতীয় সংসদেও যুক্তিসহকারে বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। আবদুর রাজ্জাক সব সময় চাইতেন মেধাবী, সংস্কৃতিমনারা ছাত্রলীগকে সমৃদ্ধ করুক। তাই ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সংস্কৃতি সভা’ গঠন করার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। অসহায় কর্মীদের আর্থিক সাহায্য সহায়তা করতেও পিছপা হতেন না।
১৯৭৮ সালের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে ওবায়দুল কাদেরকে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে পঁচাত্তর পরবর্তী ছাত্রলীগের কমিটি হয়। বিপর্যস্ত সংগঠনকে চাঙ্গা করে তোলার জন্য ব্যাপক শ্রম দিতে হয়েছে। সব জায়গায় সমান সাড়া পাওয়া যায় নি। পঁচাত্তর পূর্ব অনেক ছাত্রলীগ নেতা সংগঠনচ্যূত শুধু নয়, সামরিক জান্তার সহযোগীতে পরিণত হন। আবার শাসক দলের লোকজনও সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে গোলমাল তৈরি করতো। প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর হামলা মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে দৃঢ় পদক্ষেপে। জেল থেকে বেরিয়ে আবদুর রাজ্জাক সচেষ্ট ছিলেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সক্রিয় করে সারাদেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলতে। ১৯৭৭ সালে জান্তা শাসক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চালু করে, যাতে ছাত্র সংগঠনকে মূল দলের অঙ্গ সংগঠন করা বাধ্যতা মূলক করা হয়। অথচ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ছিল স্বাধীন সংগঠন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ভূমিকা পালন করতো। ছাত্রলীগের অগ্রযাত্রায় সেদিন আবদুর রাজ্জাক সীমাহীন পরিশ্রম করেছেন। আর এই কাজ করতে যেয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে প্রগাঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যা অটুট ছিল।
ষাটের দশকের মাঠ মাতানো ছাত্রনেতা, ছাত্রলীগের দু’বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও এদেশের প্রথম সারির প্রবীণ রাজনীতিবিদ ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। একদা ছাত্রনেতা কাজী জাফর আহমেদ আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘৬২-এর সামরিক শাসনবিরোধী শিক্ষা আন্দোলন ও ‘৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ‘৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান সর্বোপরি সুমহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুর রাজ্জাকের রয়েছে ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল অবদান। ইতিহাসের এই সত্যকে যারা অস্বীকার করবেন তারা অবশ্যই জ্ঞানপাপী। যৌবনে আবদুর রাজ্জাক সুঠামদেহ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি কারাগারে নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। এক সময় তিনি কুস্তিসীরও ছিলেন। কারাজীবন থেকেই রাজ্জাককে আমি ঘনিষ্ঠভাবে চিনি। তাঁর মতো সৎ, দেশপ্রেমিক, অমায়িক, নির্লোভ এবং আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত ব্যক্তিত্ব খুব কমই দেখেছি। কারাগারে এবং কারাগারের বাইরে দল-মত নির্বিশেষে রাজ্জাক সবার ¯েœহ-ভালবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র। ”
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালে ১ আগস্ট শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তাঁর পিতার নাম ইমামউদ্দিন এবং মাতার নাম বেগম আকফাতুন্নেছা। তিনি ১৯৫৮ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয থেকে এস এস সি এবং ১৯৬০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং পরে মাস্টার্স পাস করেন। ১৯৬৭ সালে এলএলবি পাস করার পর ১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত হন।
সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের শুরু পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬০-৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬৩-৬৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫-৬৭ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক পরপর দু’বার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহ-সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন।
১৯৬৯-৭২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের প্রধান ছিলেন। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫-৭৮ সাল পর্যন্ত বাকশালের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৮-৮১ সাল পর্যন্ত পরপর দুইবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে বাকশাল গঠন করে ’৯১ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাকশাল বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। ১৯৯১-২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যমত এই সংগঠক বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রয়েছে তাঁর। ওই সময় গঠিত মুজিব বাহিনীর একজন সংগঠক ও রূপকারও ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের মেঘালয়ে মুজিব বাহিনীর সেক্টর কমান্ডারের (মুজিব বাহিনীর চার সেক্টর কমান্ডারের একজন) দায়িত্ব পালন করেছেন। দেরাদুনে ভারতের সেনাবাহিনীর জেনারেল উবানের কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া এই বীরযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষকও ছিলেন।
স্বাধীনতার পর সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও যাবতীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন তিনি। নব্বই দশকের শুরুতে শহীদ-জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন আবদুর রাজ্জাক।
ছাত্র রাজনীতির সময় থেকেই আবদুর রাজ্জাক আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হয়ে পড়ায় তখন থেকেই অত্যাচার-নির্যাতন ও জেলজুলুমও ভোগ করেন। রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেফতার হন তিনি। আইয়ূব খানের শাসনামলে ১৯৬৪ সালে প্রথম গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন। কারাগার থেকেই মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নেন। এরপর ৬ দফা আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৬৭-৬৯ সাল পর্যন্ত কারারুদ্ধ ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আবারও গ্রেফতার হয়ে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কারাবন্দী ছিলেন। এরশাদের শাসনামলে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৭৮ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
আবদুর রাজ্জাক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৭৩,১৯৯১,১৯৯৬,২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নির্বাচনী এলাকা শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-গোসাইরহাট)। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবদুর রাজ্জাক ওই সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী থাকাকালেই ১৯৯৭ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি সই হয়। এর আগে পঞ্চম জাতীয় সংসদের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত জোট সরকারের সময় অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এই পদে থেকে তাঁর নেতৃত্বেই ২০০৯ সালের জুলাই-আগস্টে একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল ভারতে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প পরিদর্শন করে। দেশে ফিরে তিনি সংসদে রিপোর্ট দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হবে এমন কোন প্রকল্প ভারত বাস্তবায়ন করবে না বলে সে দেশের মন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা এবং সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আজীবন লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি শান্তি আন্দোলনেও অবদান রেখেছেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার, নেতাজী সুভাষ বোস আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ আন্তজার্তিক পুরস্কার অর্জন করেন এই বর্ষীয়ান নেতা। তবে রাষ্ট্রীয় কোন পদক পান নি। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিশ্বের বহু দেশ সফর করেছেন। মরহুম এই নেতার অন্যতম সখ ছিল খেলা দেখা ও গান শোনা।
লন্ডনের একটি নয়, দুটি হাসপাতালে দীর্ঘ কয়েকমাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। দীর্ঘকাল লিভারের জটিল অসুখে ভুগছিলেন। তার দেহে নতুন লিভার সংযোজন জরুরী হয়ে পড়েছিলো। শেষ পর্যন্ত একটি লিভারের ব্যবস্থা হলো। কিন্তু সেটি সুস্থ্য লিভার নয়। চিকিৎসায় অর্থাভাবও ছিল। অর্থের সংস্থানও হলো; বন্ধুরা হাত বাড়ালেন। কিন্তু নতুন লিভার সংস্থাপনের মতো শারীরিক অবস্থা তাঁর ছিল না। চিকিৎসকরা দেহে অ¯্রােপচারের জন্য সময় নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিড়ম্বিত ভাগ্যই যেন। দেখা গেল, যার কাছ থেকে লিভার পাওয়া নিশ্চিত ছিল তিনি নিজেই অসুস্থ। একটি লিভারের অভাবে তাঁকে বাঁচানো যাবে না, স্পষ্ট হয়ে ওঠেছিল তখনই। চিকিৎসকরাও বলছিলেন, অপারেশন সহ্য করার মতো সবল নয় তার শারীরিক অবস্থা। শেষ পর্যন্ত লাইফ সাপোর্ট মেশিনে রাখা হয়েছিল। যখন চিকিৎসকরা স্পষ্ট হলেন যে, জীবন রক্ষার আর কোনো উপায় নেই, তখন শরীর থেকে খুলে নেওয়া হলো লাইফ সাপোর্ট।
দিনটি ছিল শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর। ঢাকায় খবর পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙ্গে পড়ি শোকে। কষ্টে বুক ভেঙ্গে যাচ্ছিল। পিতার মতো, বটবৃক্ষের মতো ¯েœহ, ছায়া, মমতা এবং জীবন চলার দিক নির্দেশনাদাতা আর নেই, এমনটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিল সতীর্থসহ আমারও। যে তিনি একসময় শরীর চর্চা করতেন ছাত্র জীবনে, পরবর্তীকালে জেল, জুলুম আর প্রচন্ড কায়িক শ্রমে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। নানা অসুখ বিসুখ এসে বাসা বাঁধে। সামরিক জান্তা শাসনকালে বহুদিন থাকতে হয়েছে আত্মগোপনে। খাবার-দাবারে অনিয়মে শরীরে রোগ বাসা বাঁধে। নিজের দিকে ফিরে তাকানোর অবসর খুব কমই ছিল। সংসার যাপনে বিঘœ ঘটতো ওই সময়গুলোতে।
অসুস্থ মানুষটি শেষ শয্যায় শায়িত হাসাপাতালে। কিন্তু ভুলে যাননি, ¯েœহধন্যদের। ফোন করে কথা বলেছেন। দেশ, জাতি, রাজনীতি নিয়ে ভাবনার কথাও বলেছেন। সহযোদ্ধাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। অনেক কর্মীর প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। বেঁচে থাকার উদগ্র আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে চেয়েছেন। চেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে আরো বেশী মনোনিবেশ করতে। ফোনে যখন কথা বলতেন, বুঝতে পারতাম অশ্রু সংবরণ করতে পারছেন না। চিকিৎসকরাও বেশী কথা বলা বারণ করেছিলেন। ছাত্রজীবনে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আবদুর রাজ্জাক কুস্তিতে ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ পদকও পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনিয়ম ও উদাসীনতা তাকে ধীরে ধীরে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়।
পিতার মৃত্যু যেমন বুকভরে শূন্যতা তৈরি করে সন্তানের, অভিভাবক অগ্রজ রাজ্জাক ভাইয়ের তিরোধান অনুরূপ শূন্যতার পরিমন্ডল ও আবহ তৈরি করেছে। মৃত্যু তাঁকে নিয়ে গেছে। কিন্তু রেখে গেছে অজয় অমর স্মৃতি। শ্রম আর কর্মের গৌরবে যা দেদীপ্যমান।
লেখক : সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৪