রাবি (রাজশাহী): ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও সামরিক শাসকদের রেখে যাওয়া জঞ্জাল আগলে রাখলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিরাপদ হবে না, সামনেও এগিয়ে যাবে না। এসব জঞ্জাল দুর্গন্ধ ও বিষবাষ্পই ছড়াবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত শহীদ ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি এসব কথা বলেন।
তিনি ‘‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে জঞ্জালমুক্ত করতে হবে’’ শীর্ষক বক্তৃতায় আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় ও বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছিল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক সংবিধান। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করার মতো প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক অবস্থা ছিল না। - বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য জঙ্গি দমন, আত্ম শক্তি উন্নয়ন, বৈষম্য দূরীকরণ ও সুশাসনের জন্য যুদ্ধ চালাতে হবে, বিজয়ী হতে হবে। আর সে বিজয়ের প্রধান রাজনৈতিক সূত্র হচ্ছে- গণতন্ত্রে জঞ্জাল থাকবে না। জঞ্জাল বাদ দিতেই হবে। তাহলেই কেবল বাংলাদেশ শান্তির মুখ দেখবে, সমৃদ্ধির স্বাদ গ্রহণ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ।
গণঅভ্যুত্থানের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে শহীদ হন রাবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। এ অনুষ্ঠানে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তার রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. বিলকিস জাহান লুম্বিনীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে শহীদ ড. জোহার জীবনালেখ্যও পাঠ করা হয়।
দিবসটির অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারসহ রাবি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ও এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভিন্ন বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রভাত ফেরি করে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিবসের কর্মসূচিতে ভোরে প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এছাড়া বৃহস্পতিবার বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়া শহীদ শামসুজ্জোহা হলে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা রাখা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারে দাবি ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পৌঁছুলে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের বাধা দেয়।
এ সময় সেনারা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করতে উদ্যত হলে তৎকালীন প্রক্টর শামসুজ্জোহা গুলি না করতে বার বার অনুরোধ করেন। কিন্তু সেনারা সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে গুলি চালাতে গেলে ড. জোহা নিজে এগিয়ে যান। এসময় তাকে লক্ষ্য করেই গুলি চালায় সেনারা। গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল অফিসে একটা টেবিলের ওপর ফেলে রাখা হয় বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। বিকেলে ৪টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জিক্যাল রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
এসআই