ঢাকা: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রথম পর্বের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া এরইমধ্যে শেষ।
শুধু অভিযোগই নয়, বিক্ষুব্ধরা বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা যায়। এই পরিস্থিতিতে দলের মনোনয়ন না পাওয়া বিক্ষুব্ধদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা দলের নেতাদের। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা পরিবর্তনের পক্ষে তারা।
প্রথম ধাপে আগামী ২২ মার্চ ৭৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ২২ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে দলীয় প্রার্থীদের নামে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নানামুখী অভিযোগ সেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবং তৃণমূলে মনোনয়ন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় চারশ’র মতো অভিযোগ এসেছে বলে দপ্তর সূত্র এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছ থেকে জানা যায়।
অভিযোগের বিষয়গুলো দলের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচাই করে দেখবেন। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে প্রয়োজনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনও হবে। সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন নেতারা।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় বা বিগত দিনে দলের জন্য কোনো অবদান না রাখা, সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত, হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিদের মনোনয়ন প্রভৃতি।
এছাড়া হঠাৎ করে অন্য দল থেকে বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা কেউ কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। কেউ অবার স্বাধীনতাবিরোধী পরিবার থেকে উঠে আসা।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের মনোনয়ন পেয়েছেন এমন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের সরিয়ে নতুন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। ২২ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই শেষ দিনের আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ থাকতেই পারে। আমরা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবো।
দলের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগের সত্যতা আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে মনোনয়ন পরিবর্তন করেও দেওয়া হতে পারে। দলীয় শৃঙ্খলা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যারা মনোনয়ন পাননি তারা তো অভিযোগ করতেই পারেন। সব অভিযোগই সত্য হবে এমন না। যেসব জায়গায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে সেখানে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এখনও তো সময় আছে।
প্রথমবার দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে যে কোনো বারের তুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ ইউনিয়নেই ৭/৮ জন করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এদের ভেতর থেকে একজনকে দরীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা আওয়ামী লীগ নেতাদের।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এসকে/এএ