ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নিলামে তুলে ইউপি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বিক্রি!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
নিলামে তুলে ইউপি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বিক্রি!

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে ফুলপুর উপজেলার ৫নং ফুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনবারের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান খোকা।

স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপিও তাকে দলটির একক প্রার্থী হিসেবে বাছাই করেছিল।

কিন্তু দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার তাকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন মাদিউর রহমান মাহাদীকে। মাহাদীর মা এ পরিষদের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান রুবিনা। তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী।

গত ঈদ-উল-আজহায় তিনি ভিজিএফ কার্ডে সরকার দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদের ছবি দিয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন। আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলেকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির তৃণমূলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

মনোনয়ন বঞ্চিত মোস্তাফিজুর রহমান খোকা বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, ‘প্রকাশ্যে নিলামে তুলে সারোয়ার আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলের কাছে বিএনপির মনোনয়ন বিক্রি করেছেন। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে যে বেশি টাকা দিয়েছেন, তাকেই তিনি দলের মনোনয়ন দিয়েছেন। ’

অবশ্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মাহাদী নিজেকে তারেক পরিষদের সাবেক আহবায়ক দাবি করেন।

২নং রামভদ্রপুর ইউনিয়নে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান রোকন। দলের ইউনিয়নে কিংবা উপজেলায় তার প্রাথমিক সদস্যপদও নেই। এ নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি নেতা খালেদ মোশাররফ সোহাগকে মনোনয়ন না দেওয়ায় দলটির ১২৩ জন নেতাকর্মী ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে, ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির পদত্যাগী সভাপতি বাবুল মাস্টার। তিনি এবং মনোনয়ন বঞ্চিত খালেদ মোশাররফ সোহাগ অভিন্ন সুরে অভিযোগ করেন, প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার বহু অপকর্মের হোতা রোকনকে ধানের শীষ প্রতীক পাইয়ে দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন নিলামে তুলে বিক্রি করেছেন।

উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মোশাররফ সোহাগ আরও বলেন, নির্বাচনের আগেই সারোয়ার বলেছিলেন ১০টি ইউনিয়নে মনোনয়নপ্রাপ্তদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে তুলে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে খরচ বাবদ দিতে হবে।

প্রথম ধাপে আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ময়মনসিংহের ফুলপুরের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সংসদের বাইরে থাকা সাবেক প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের এসব অভিযোগ উঠে।

দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এসব ইউনিয়ন পরিষদে নিজের পছন্দমতো, বিতর্কিত ও ভিন্নমতের লোকদের মনোনয়ন দিয়ে কোটি-কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার।

আর এ বাণিজ্যের ভাগ গেছে দলটির কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতাদের পকেটেও। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ে পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে তৃণমূলের মতামত।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়ান ইলেভেনের পর (২০০৭ সালে) সংস্কার শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার। ছিলেন বিএনপির প্রয়াত বহিষ্কৃত মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার ডান হাত।

পরবর্তীতে ভোল পাল্টে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন। কিন্তু নামের পাশে সংস্কার তকমা থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্রমশ তার দূরত্ব বাড়ে। উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক আরেক সংস্কারপন্থি খুররম খান চৌধুরীকে ম্যানেজ করে দায়িত্ব নেন ফুলপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ।

৮নং রূপসী ইউনিয়নেও মনোনয়ন নিয়ে বিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা সাইফুল ইসলাম শাজাহানকে সমর্থন দিলেও সাবেক সংসদ সদস্য সারোয়ার মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন তার মামা আবুল কালাম আজাদকে।

৬নং পয়ারী ইউনিয়নে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন গত ইউপি নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করা মফিদুল ইসলাম।

মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য সারোয়ার প্রকাশ্যে নিলামের মতো করে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করেছেন। কেন্দ্রের এ ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত এবারের নির্বাচনে দলকে দিতে হবে।

ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহবায়ক ও তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করে সাবেক সংসদ সদস্য সারোয়ার কোটি-কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। তার এ বাণিজ্যের প্রতিবাদে একটি ইউনিয়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা গণপদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

বিক্ষুব্ধ এসব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মোতাহার। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, দলীয় চেয়ারপারসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

একই রকম অভিযোগ করেন উত্তর জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম-আহবায়ক ও ফুলপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল বাশার আকন্দ। তিনি বলেন, সারোয়ারের মনোনয়ন বাণিজ্যের খবর দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে।

এসব বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন ধরেন অজ্ঞাত পরিচয় একব্যক্তি।

‘এমপি সাহেব ব্যস্ত আছেন’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর আর কল দিয়েও সাড়া মেলেনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।