ঢাকা: অর্থপাচার মামলায় খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিষয়ে বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দুই ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে হাইকোর্টকে অবহিত করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে বিষয়টি অবহিত করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আদালতে বলেছি- আত্মসর্মণের জন্য এবং আপিলের বিষয়ে অবহিতের জন্য নামকরা দুই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। চার্জশিটে থাকা দুই ঠিকানায় (লন্ডন ও ঢাকা) সমনের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এরপর আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিন ঠিক করে দিয়েছেন। ’
অর্থপাচার (মানিলন্ডারিং) মামলায় তারেক রহমানের খালাস পাওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপিলের পর ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু তিনি অদ্যবধি আত্মসমর্পণ করেননি।
এরপর মামলাটি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যতালিকায় এলে ১২ জানুয়ারি ফের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এ বিষয়ে ২০ জানুয়ারি ও ২১ জানুয়ারি দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন। বিষয়টি আদালতকে অবহিতের পর সমনের নোটিশ তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে কিনা- তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এরই জেরে বুধবার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়।
এ বিষয়ে খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, এ মামলায় আপিল শুনানির দিন ঠিক করার জন্য আবেদন জানিয়েছি।
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অর্থপাচার মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত।
রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেন আদালত।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তারেক রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমপর্ণের আদেশ দেন বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এরপর গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় দুদক। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ১২ জানুয়ারি তারেকের বিরুদ্ধে সমনে নোটিশ জারির আদেশ দেন।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০০২ এর ২ (ঠ), (অ), (আ) ও ১৩ ধারায় দুদকের করা মামলার রায়টি দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন ।
মামলা দায়ের থেকে রায় পর্যন্ত পুরো বিচার প্রক্রিয়ায়ই তারেক রহমান অনুপস্থিত ছিলেন।
খালাসপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। মামুনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রায়ে বিচারক বলেন, মামলার প্রধান সাক্ষী নির্মাণ কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলাম মামুনকে দেওয়া টাকা কন্সালট্যান্সি ফি হিসেবে দিয়েছেন সাক্ষ্যে বলেছেন।
মামুনও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে ওই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু ওই পরিমাণ টাকা ফি হিসেবে নেওয়ার মতো কন্সালট্যান্সি ফার্ম মামুনের ছিল না।
এই টাকা অনৈতিকভাবে চাপ দিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
পরে ওই টাকা দেশে গ্রহণ করলে বিভিন্ন ঝামেলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিদেশে তা গ্রহণ করা হয়। যা মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মামুনের অ্যাকাউন্ট থেকে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ৫০ হাজার ডলার উত্তোলন করে খরচ করেছেন। ওই টাকা খরচ করার কথা তারেক রহমানও অস্বীকার করেননি।
২০০৭ সালে তারেক রহমান দুদকে দাখিল করা হিসাব বিবরণীতে তা উল্লেখ করেছেন বিধায় তারেকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হলো।
২০১৩ সালের ২৬ মে তৎকালীন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোজাম্মেল হোসেন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন।
২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়, যাদের মধ্যে চার্জশিটের বাইরে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেশটিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেট।
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলাটি করে দুদক। এরপর ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এই টাকা লেনদেন হয়।
এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
ইএস/এমএ