ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই দেখতে চান আশি ও নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতারা। বর্তমান বিএনপির মূল ধারার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী এ অংশটি ফখরুলের পক্ষে একাট্টা।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসীন সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
সব ঠিক থাকার পরও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায়সহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বা তাদের একটি অংশ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ ফখরুলকে দিতে চান না। এ অংশটি ফখরুলের জায়গায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তরিকুল ইসলামকে বসানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহামনের কাছে তারা অনবরত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফাঁক-ফোকরগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে মহাসচিব পদ গ্রহণের জন্য তরিকুল ইসলামকে রাজি করানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তারা। পাশাপাশি আগে থেকে এ পদে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে তার অবস্থানে অনড় থাকার জন্য বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
সূত্রমতে, ফখরুলবিরোধী এ অংশটির তৎপরতার প্রেক্ষিতে আশি ও নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ডাকসুর সাবেক ভিপি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজি আসাদ, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলাতানা, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ গত তিন দশকের বেশিরভাগ ছাত্রনেতাই বিএনপির মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেখতে চান।
সূত্রমতে, সাবেক এই ছাত্রনেতারা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন যে, দলের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার বিচারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই তাদের এক নম্বর পছন্দ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু বাংলানিউজকে বলেন, যোগ্যতা, সততা, পরিচ্ছন্ন ইমেজ, দলের প্রতি আনুগত্যসহ মহাসচিব হওয়ার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুই আছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে। সুতরাং এ পদে তাকেই বিবেচনা করা হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে যে কোনো ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার চেয়ারপারসনের ওপর ন্যাস্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই মেনে নেবো।
শুধু ছাত্রনেতা নয়, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারাও পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই দেখতে চান।
এদের মধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ শামা ওবায়েদের মতো তরুণ নেতারা চান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব হোক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয়নুল আবিদ ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা থেকেই গত কাউন্সিলের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছিল। এর পর খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাজ করিয়ে নিতে চান বলেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) তাকে একটু একটু করে তৈরি করে নিয়েছেন। দায়িত্ব এখন তাকে ছাড়া আর কাকে দেবেন।
এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকাসহ বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই ফখরুলকে মহাসচিব হিসেবে দেখতে চান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৬
এজেড/আইএ/