ঢাকা, সোমবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

রাজনীতি

নতুনভাবে বিকশিত হচ্ছে বিমসটেক

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
নতুনভাবে বিকশিত হচ্ছে বিমসটেক

ঢাকা: বারবার নানা জটিলতায় আটকে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জোট সার্কের কার্যক্রম। সেখানে পাকিস্তানকে অন্যতম সমস্যা হিসেবে দেখছে একাধিক সদস্য দেশ।

ফলে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ নিয়ে ভাবছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। সে অনুযায়ী বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে বঙ্গোপসাগরভিত্তিক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট বিমসটেক।

প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে বিকশিত হতে যাচ্ছে জোটটি। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটটির বর্তমান সদস্যরা হলো- বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপাল। মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান ছাড়া সার্কের বাকি সদস্যরাই এ জোটে রয়েছে। তবে মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকে শুরুতে পর্যবেক্ষক ও পরে বিমসটেকের সদস্য করারও ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। ফলে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে বিমসটেক কার্যকর জোট হিসেবে দাঁড়াতে পারে।

এসব তৎপরতা শুধু ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ নেই যার প্রমাণ মেলে ভারতের গোয়ায় শুরু হওয়া ব্রিকস সম্মেলনের আউটরিচে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানোয়। ব্রিকস সম্মেলনের এবারের সভাপতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্রিকস সম্মেলনের আউটরিচে যোগ দেবেন বিমসটেকের সদস্যদেশগুলোর প্রধানরা। এর মাধ্যমে এসব দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিকস’র সদস্য ও উদীয়মান উন্নয়নশীল পাঁচ দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন মাত্রা তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা এ অঞ্চলের এক নতুন মেরুকরণই বলছেন বিশ্লেষকেরা।

এ সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার (১৬ অক্টোবর) ভারতের গোয়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোয়ায় অনুষ্ঠেয় ১৫-১৬ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের থিম হচ্ছে- ‘ব্রিকস-বিমসটেক : একটি অংশীদারিত্বের সুযোগ। ’

এ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। যাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রেয়ুট চ্যান-ওচা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তান ইস্যুতে রুষ্ট হয়ে নরেন্দ্র মোদি নতুন এক আঞ্চলিক মেরুকরণের জন্য ব্রিকস ও বিমসটেক’র মধ্যে একটি সেতুবন্ধন করতে চাইছেন। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ মনে করলেও ব্রিকস ও বিমসটেকের অভ্যন্তরীণ কারণে সেটি কার্যকর হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন তারা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকজন গণমাধ্যমের সদস্য ভারত সরকারের নিমন্ত্রণে দেশটি সফরে গেলে এক মতবিনিময় সভায় ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার এবং বর্তমানে ভারতের শীর্ষস্থানীয় নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা ওআরএফ এর সম্মানিত ফেলো পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “সার্ক রেল যোগাযোগ চুক্তি, আফগানিস্তানে পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান, বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদ দমন কোনো ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়নি কেবল পাকিস্তানের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে। এখন সময়ের দাবি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় এগিয়ে নেওয়া। এক্ষেত্রে বিমসটেক প্রস্তুত রয়েছে। ”

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের নেতৃত্বে বড় দেশগুলোর (ব্রিকস’র সদস্য) সঙ্গে এ অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর (বিমসটেক’র সদস্য) মিলন ঘটানোর চিন্তা থেকে এ দু’টি সংস্থাকে একসঙ্গে ডেকেছেন। একইসঙ্গে পাকিস্তানকে পৃথক করার চেষ্টা থেকেও সেটা করতে পারেন। তবে ব্রিকসের মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে। বিমসটেকও বলতে গেলে এমন কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি। ফলে এটা কতটুকু কার্যকর হবে সেটা বলা মুশকিল। ”

তার মতে, ব্রিকস আর বিমসটেক মেলানোর চেয়ে এ অঞ্চলে ভারতের নেতৃত্ব প্রকাশ করার উদ্যোগও হতে পারে এটা।

৯ ঘণ্টায় ১০ কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীর
এদিকে বাংলানিউজের বিশেষ সংবাদদাতা জানান, মোট ৯ কর্মঘণ্টায় ১০টি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির ব্যস্ততা নিয়ে রোববার সকালে ভারতের দক্ষিণ-পঞ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রায় ২০ ঘণ্টার এই সফরে প্রধানত বিমসটেক-ব্রিকস শীর্ষনেতাদের আউটরিচ সামিটে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও অংশ নেবেন বিমসটেক লিডারস রিট্রিট কর্মসূচিতে।

সম্মেলনের সাইডলাইনে অন্তত পাঁচটি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক চূড়ান্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কর্মসূচি অনুযায়ী, রোববার সকাল ৮টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইটযোগে গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের  কর্মকর্তা ও একটি মিডিয়া টিমের সদস্যরা এই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছে।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় গোয়া নেভাল এয়ারপোর্টে পৌঁছালে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন গোয়া সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী এলিনা সালদানহা ও সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ্ম জইসওয়াল। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও মুম্বাইয়ে নিযুক্ত ডেপুটি হাইকমিশনার এ সময় উপস্থিত থাকবেন।

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা, স্ট্যাটিক গার্ড প্রদর্শন ও সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে বরণ করার পর তাকে নিয়ে যাওয়া হবে গোয়ার হোটেল দ্য লীলায়। সফরকালে এই হোটেলেই অবস্থান করবেন তিনি।
 
দিনের প্রথম কর্মসূচি শুরু হবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে। চূড়ান্ত সময় না জানালেও দুপুরের আগেই যে কোনও একটি সময়ে হোটেল স্যুটেই এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী লক্ষীকান্ত পরেস্কারের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজ সভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। বিমসটেক নেতাদের সম্মানে এই মধ্যাহ্নভোজ আয়োজন করা হবে জমস্বর টেরাসে। দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বসবেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রযুত চান ওচার সঙ্গে।

২০ মিনিটের এই বৈঠক শেষ করার পরপরই বেলা আড়াইটায় দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক রয়েছে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। পুতিনের আবাসস্থল হোটেল
তাজ এক্সোটিকায় এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বেলা পৌনে চারটায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন বিমসটেক নেতাদের রিট্রিট কর্মসূচিতে। ইটালিয়ান রেস্টুরেন্টে এই রিট্রিট কর্মসূচিতে সূচনা বক্তব্য রাখবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে বিমসটেক’র মহাসচিবের ব্রিফিং শেষ হলে বিমসটেকের সকল সরকার-কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান এতে বক্তব্য রাখবেন। বিমসটেক নেতা হিসেবে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। নরেন্দ্র মোদির সমাপনী বক্তৃতার মধ্য দিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে ব্রিকস-বিমসটেক নেতাদের যৌথ ফটোসেশনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর বিকেল পৌনে ৫টায় শুরু হবে ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিট। ব্রিকস ও বিমসটেকের মধ্যে অংশীদারীত্বের সুযোগকে প্রতিপাদ্য ধরে এই আলোচনায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সকল শীর্ষ নেতাই এতে বক্তব্য রাখবেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে। রাত সোয়া ৮টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক হবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালের সঙ্গে। আর রাত ৯টায় দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যেখানে তিস্তার চুক্তির বিষয়ে জোর দেওয়া বলে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।

আধা ঘণ্টাব্যাপী এই দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে সফরের সকল আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি সম্পন্ন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরের দিন স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১০৯২ যোগে ঢাকার উদ্দেশে গোয়া নেভাল এয়ারপোর্ট ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার সময় বেলা পৌনে ১১টায় তাকে বহনকারী ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
জেপি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।