অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকেও সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রোববার (২৩ এপ্রিল) রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা।
এতোদিন উন্নয়ন ও ইশতেহারের বাণী ছড়িয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। এবার ভোটারদের হিসাব-নিকাশের পালা। পৌরসভার জন্মলগ্ন থেকে এতোদিন প্রশাসক দিয়ে কার্যক্রম চলে আসলেও জনতার রায়ে কে হবেন পৌরসভার প্রথম মেয়র। শুধু বিয়ানীবাজারবাসীই নয়, পুরো সিলেটের দৃষ্টি এখন সিলেটের ‘গুলশান’ খ্যাত প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজারের দিকে।
প্রথমবারের মতো নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আব্দুস শুক্কুর (নৌকা), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেম পল্লব (মোবাইল ফোন), বিএনপি মনোনীত আবু নাছের পিন্টু (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন (জগ), জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী জমির উদ্দিন (রেল ইঞ্জিন), জাসদ মনোনীত প্রার্থী শমশের আলম (মশাল)।
এছাড়া উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আমান উদ্দিন, (কম্পিউটার) ও বদরুল হক (চশমা)।
পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সাতজন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের হিসেবে নৌকা, ধানের শীষ ও জগ মার্কার প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এমন ধারণা পৌর এলাকারবাসীর।
ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের ভোট বেশি থাকা ও শিক্ষামন্ত্রীর জনপ্রিয়তা কাজ করবে শুক্কুরের ভোটের পেছনে। তাই ভোটের মাঠে তাকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন কসবা খাসা এলাকার সুফিয়ান আহমেদ।
জগ মার্কায় তফজ্জুল হোসেনের দীর্ঘদিনের পুঁজি রিজার্ভ ভোট। তাছাড়া তার বাড়ি পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বাধিক তিন সহস্রাধিক ভোট রয়েছে। এ কারণে তার অবস্থানকে শক্ত করে রেখেছেন। তবে দীর্ঘদিন প্রশাসক থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভোটের বাক্সে।
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচন সংগ্রাম পরিষদ নেতা রফিক উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৭ সালে বিয়ানীবাজার সদর ইউনিয়ন নির্বাচন হয়েছিল। ২০০১ সালে পৌরসভা গঠন হয়। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষে ২১টি বছর স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে পার করেছে। এবার ভোটের মাধ্যমে তাদের কাঙ্খিত প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবে। পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ৭টি মামলা এখনও চলমান রয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।
ব্যক্তি হিসেবে পৌরশহরে সুনাম রয়েছে বিএনপির প্রার্থী আবু নাছের পিন্টুর। পৌর এলাকার বিএনপির যথেষ্ট ভোট নেই। এরপরও নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটা যোগসূত্র ধরে নিচ্ছেন ভোটাররা।
এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজের যোগ্যতা যাঁচাইয়ের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি আলোচিত যুবলীগ নেতা ‘রিভারবেল্ট’ নামে ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতৃত্বদানকারী আবুল কাশেম পল্লব। শিক্ষামন্ত্রীর বিরোধী বলয়ের নেতা হিসেবে ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে! এমন ধারণা স্থানীয়দের।
নির্বাচনকে অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলে জানিয়ে জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. মুনির হোসেন বলেন, রোববার রাত ১২টা থেকে প্রচার-প্রচারণ বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে মাঠে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একজন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছয়জন। নির্বাচন কমিশনের তিনজন নিজস্ব পর্যবেক্ষক, ৩ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ১ প্লাটুন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার ২৫ হাজার ২৪ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৪শ’ ৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১২ হাজার ৫শ’ ৯৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
এনইউ/জিপি/বিএস