ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বৃহস্পতিবার কার্যতালিকায় থাকবে খালেদার আপিল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
বৃহস্পতিবার কার্যতালিকায় থাকবে খালেদার আপিল খালেদা জিয়া/ফাইল ছবি

ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিলের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের কার্যতালিকায় থাকবে।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আপিল আবেদন উপস্থাপনের পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে এ আবেদনটি উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন।

এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশিদ আলম খান।

জয়নুল আবেদিন আপিল আবেদন উপস্থাপনের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমরা এতো বড় রায় এখনো পড়ে দেখতে পারিনি, এখনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। কি সব যুক্তিতে ওনারা আপিল করেছেন সেটাও আমরা এখনো পাইনি।  এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুলিপি সরবরাহ করতে খালেদার আইনজীবীদের নির্দেশ দেন।

আদেশের পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার আপিল গ্রহণের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। শুনানির জন্য আপিল গ্রহণ করা হলে ওইদিনই আমরা জামিন আবেদন করব। আশা করি উনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাবেন।

বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২৫টি যুক্তিতে ১২২৩ পৃষ্ঠার এ আপিল (আপিল নং ১৬৭৬/২০১৮) দায়ের করেন। আপিলের ফাইলিং আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খানের নামও রয়েছে। আপিলের যুক্তিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে খালাসের আবেদন করা হয়েছে।

এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার আপিলের প্রস্তুতি নিয়ে এবং কোন কোর্টে যাবেন সে বিষয় নির্ধারণে দু’দফায় বৈঠক করেছেন তার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলায় প্রথম দফায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন আইনজীবীরা। বিরতি দিয়ে দুপুর ১টার পর ফের তারা বৈঠক করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।

৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ঢাকার বকশীবাজার কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত আদালতের বিশেষ জজ ৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদণ্ডের রায় দেন। একইসঙ্গে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

৪০৯ ও ১০৯ ধারা মোতাবেক আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দেন।

রায় ঘোষণার ১১দিন পর সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফাইড কপি বা অনুলিপি হাতে পান। রায়ের কপি নিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজলও।

বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বিশেষ জজ আদালত-৫ –এর বিচারক আখতারুজ্জামানের কার্যালয় থেকে এ অনুলিপি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এই অনুলিপি নেন।

রায়ের দিন আদালত ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়েন। সোমবার যে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে তা ১১৭৪ পৃষ্ঠার।

এদিকে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে।

পরিমাণের দিক থেকে তা বর্তমান বাজার মূল্যে অধিক না হলেও তর্কিত ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিলো। আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া ওই সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল সংসদ সদস্য ছিলেন। আসামি কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী সরকারি কর্মচারী হয়েও আসামি খালেদা জিয়াকে সরকারি এতিম তহবিলের ব্যাংক হিসাব খুলতে সহায়তা করেন।

পরবর্তীতে ওই হিসাব থেকে দু’টি প্রাইভেট ট্রাস্টের অনুকূলে সরকারি অর্থের চেক বেআইনিভাবে প্রদান করায় খালেদা জিয়া ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী অপরাধ করতে সহায়তার সামিল।

আসামি তারেক রহমান, মমিনুর রহমান ও শরফুদ্দিন আহমেদ কৌশল অবলম্বন করে সরকারি তহবিলের টাকা একে অপরের সহযোগিতায় আত্মসাত করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন। এর মাধ্যমে এই মামলার ছয়জন আসামির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছেন। আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবেও গণ্য হবেন। অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং উহার বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয়।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্কে যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল রায়ে তা খণ্ডন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

সাজা ঘোষণার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

**সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আপিল
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।