বুধবার (১৪ মার্চ) প্রধান বিচারপতির আদালতে খালেদার জামিন স্থগিতের আদেশের সঙ্গে সঙ্গে খালেদার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের কথা না শুনে আদেশ দেওয়া হলো। আমাদেরও তো বক্তব্য আছে।
তখন আপিল বিভাগ বলেন, পাবলিক পারসেপশন কী হচ্ছে আদালত সেদিকে তাকায় না।
জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালত স্থগিত করেনি। আর আসামি তো বের হতে পারছেন না। তাহলে স্টে কেন প্রয়োজন?
এ সময় উঠে দাঁড়ান আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীও। তিনি বলেন, আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না।
এর মধ্যে আদালত কজলিস্ট অনুসারে পরবর্তী মামলার শুনানি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তখনও আদালত কক্ষেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় আদালত বলেন, আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? দাঁড়িয়ে থাকলে আদালতের ডেকোরাম নষ্ট হয়।
ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না?
তখন আদালত বলেন, কার কথা শুনবো আর কার কথা শুনবো না তা কী আপনার কাছ থেকে শুনতে হবে?
জবাবে গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনাকে শুনতে হবে।
আদালত বলেন, আপনি কী আদালতকে থ্রেট (হুমকি) করছেন? বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে।
এরপর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী আপিল বিভাগ থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এর আগে সকালে শুনানির শুরুতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান। তার শুনানির মধ্যে আদালত খালেদা জিয়ার জামিনাদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে সিপি দায়ের করতে বলেন।
এ আদেশের পরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম, চিরাচরিতভাবে আপিল বিভাগ যেটা করেন, উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনেন। তারপর প্রয়োজনীয় আদেশ দেন। অথচ আজ আপিলটি দুদকের আইনজীবী প্লেস করার সঙ্গে সঙ্গে আপিল বিভাগ বললেন যে আপনারা রোববার সিপি (লিভ টু আপিল) ফাইল করেন, জামিন আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আপিল বিভাগ আমাদের কোনো বক্তব্যই শুনলেন না। আইনগতভাবে মামলাটি মোকাবেলা করার কোনো রকম সুযোগ আমাদের না দিয়েই স্টে অর্ডার পাস করলেন।
তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, আপনি আমাদের কথা না শুনে যে অর্ডার পাস করলেন তা নজিরবিহীন। এতে বিচার বিভাগের ওপর পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে। আমরা এ আদেশে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। সারাদেশের মানুষ ব্যথিত- মর্মাহত হয়েছে। বিচার বিভাগ ইতোপূর্বে কখনও এমন ছিল না। বিচার বিভাগের কাছ থেকে এটা আশা করিনি। তার কারণ আপনারা জানেন, এ ধরনের শর্ট সেন্টেন্সে (স্বল্প সাজা) দেশের সর্বোচ্চ আদালত কখনো ইন্টারফেয়ার করেন নাই। চেম্বারে স্টে না থাকার পরেও সেই মামলায় স্টে দিলেন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত আমাদের প্রার্থনার পর মামলাটি রোববারের মধ্যে লিভ পিটিশন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত থাকবে।
রোববার পর্যন্ত স্থগিতের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থগিতের কখনও রিজন দেওয়া হয় না। চেম্বার জজ বলেন আর ফুলকোর্ট বলেন, যখন স্টে দেওয়া হয় তখন কোনো রিজন দেওয়া হয় না। আদালতের এ আদেশে আমি হ্যাপি।
এরপর নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে যে জামিন দিয়েছিলেন, আজ সকালে সে জামিনের কার্যকারিতা স্থগিতের জন্য আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের বক্তব্যের মাঝে দাঁড়িয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবী আদালতকে টাইপ কপি দেখালেন যে হাইকোর্টের আদেশটি এরই মধ্যে টাইপ হয়ে গেছে এবং বিচারপতিবৃন্দ অলরেডি সইও করে দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম হলো, যখনই হাইকোর্টের আদেশটি সই হয়ে গেলে সার্টিফায়েড কপি দিয়ে যখন লিভ পিটিশন ফাইল করা হয়, আপিল বিভাগ সেটাই শুনতে চান। হাইকোর্টের আদেশ সঠিক হয়েছে কিনা এটা বিচারের জন্য উনারা (আপিল বিভাগের বিচারপতিরা) তখন লিভ পিটিশন ফাইল করতে বলেন। আজও ঠিক তাই হয়েছে। যখনই অপরপক্ষ বলেছে যে হাইকোর্ট আদেশে সই করেছেন, তখনই আপিল বিভাগ বলেছেন রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদক লিভ টু আপিল ফাইল করুক। আগামী রোববার পিটিশনের শুনানি হবে। সে পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। এটাই আপিল বিভাগের সাধারণ নিয়ম। সচরাচর আপিল বিভাগ এ রকমই আদেশ দিয়ে থাকেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যখনই তারা বলেছেন যে হাইকোর্টের আদেশটা অলরেডি সই হয়ে গেছে, তখন আপিল বিভাগ সচরাচর হান্ড্রেড পার্সেন্ট ক্ষেত্রেই মূল পিটিশনটিই শুনতে চান। সার্টিফাইড কপি দিয়ে লিভ পিটিশনটাই ফাইল করতে বলেন এবং সে পর্যন্ত স্টে দেন। মূল আদেশটি ছাড়া উভয় পক্ষকে শুনলে তো কোনো লাভ হবে না। যে আদেশটি হয়ে গেছে, সেটি পর্যালোচনা করাই হলো আপিল বিভাগের কাজ। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যা বলতে চাচ্ছেন তা সঠিক নয়। হাইকোর্টেও তারা এ রকমভাবে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগও পুরো জিনিসটা না দেখে, না শুনে রায় দিতে পারেন না, সে জন্য সঠিকভাবে বলেছেন হাইকোর্টের রায়ের সই মুহুরী অনুলিপি আসুক তখন তারা বিবেচনা করবেন হাইকোর্টের রায়টা সঠিক হয়েছে কিনা।
তিনি আরো বলেন, এমন একজন আইনজীবী আদালতে উচ্চস্বরে উষ্মা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেছিলেন যিনি খালেদা জিয়ার আইনজীবীই না। এ মামলায় কোনো সময়ই তিনি ছিলেন না। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করলে প্রধান বিচারপতি তাকে নিবৃত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮
ইএস/এসআই