বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মী সমর্থকেরা প্রচারপত্র বিলি করছেন এবং নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে চাইছেন ভোট। ভোট চাইতে ভোটের রেওয়াজ মেনে নানা প্রতিশ্রুতি দিতেও ভুল করছেন না প্রার্থীরা।
বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে বগুড়া-৬ (সদর) আসন গঠিত। এ আসনে উপ-নির্বাচনে লড়ছেন সাত প্রার্থী। তবে মূল লড়াইটা হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে বলছেন ভোটারেরা।
নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক টি জামান নিকেতা। রাজনীতিতে দক্ষ হলেও ভোটের লড়াইয়ে নবীন। ভোটের মাঠে এবারই প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে লড়ছেন তিনি।
অপরদিকে, ধানের শীষের প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ)। ভোটের রাজনীতিতে তিনি প্রবীণ। এরআগে, তিনি বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে ধানের শীষের হয়ে লড়ে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালে একটানা তিনবার জয়ী হন। যদিও সংস্কারপন্থী বনে যাওয়ায় ২০০৮ সালের তিনি দলের মনোনয়ন পাননি। তবে সদ্য সমাপ্ত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে দল তাকে ফের মনোনয়ন দিলেও হেরে যান জিএম সিরাজ।
ওই নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। উপ-নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে জিএম সিরাজকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সবমিলে উপ-নির্বাচনে এ আসনে ভোটের রাজনীতিতে নবীনের সঙ্গে প্রবীণের লড়াই হবে।
আগামী ২৪ জুন অনুষ্ঠেয় বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে নানা শ্রেণি পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে। তবে ভোটারেরা নাম প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করেন। তবে ভোট প্রার্থনার ক্ষেত্রে দুই প্রার্থী কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে মাঠে নেমেছেন বলে জানান ভোটাররা।
নৌকার প্রার্থী টি জামান নিকেতা ও তার দলের কর্মী সমর্থকেরা বলছেন, সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। কারণ বিএনপিকে ভোট দিয়ে বারবার বগুড়াবাসী অবহেলিত। উন্নয়নের আশায় বারবার বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বগুড়াবাসী নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু তিনি ভোটারদের অসম্মান করে আসনটি ছেড়ে দিয়েছেন।
একই কাজ করলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সারাদেশে বিএনপির ভরাডুবি হলেও বগুড়াবাসী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাকে বিপুল ভোট দিয়ে জয়ী করেন। কিন্তু তিনি বগুড়াবাসীর প্রতি অসম্মান দেখিয়ে শপথ নিলেন না। আসনটি শূন্য হলে গেলো। আবারো ‘অতিথি’ ব্যক্তিকে এনে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হলো। তাই উন্নয়ন চাইলে নৌকাকে জয়ী করতে হবে।
এদিকে, এ আসনকে জিয়া পরিবারের অত্যন্ত মর্যাদার আসন হিসেবে দেখছে বিএনপি। কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে ধানের শীষের জয় ধরে রাখতে আসন্ন উপ-নির্বাচনে ভোট চাইছেন দলটির প্রার্থী ও নেতাকর্মী সমর্থকেরা।
জানা যায়, ১৯৭৯ থেকে ২০০৮ সালের সবগুলো নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) এ আসনটি থেকে বিপুল ভোটে জয় পায় বিএনপি। সে হিসেবে আসনটি জিয়া পরিবারের ‘সংরক্ষিত’ বলে মনে করা হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে জয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মমতাজ উদ্দিন।
ধানের শীষের প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, বগুড়া বিএনপির দুর্গ। যার প্রমাণ বিগত নির্বাচনে এখানকার ভোটাররা দিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এবারের উপ-নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ প্রচারণায় নেমে ব্যাপকভাবে এখানকার মানুষের ভালবাসা পাচ্ছি।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগী আশাবাদী জিএম সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, ভোট চাইতে ভোটারের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখানে বিএনপির অবস্থান আগের মতোই শক্তিশালী। প্রচার-প্রচারণায় এ আসনটি জিয়া পরিবারের ‘সংরক্ষিত’ আসন হিসেবে বোঝানো হচ্ছে। এটা জিয়ার পরিবারের মর্যাদার আসন বলেও মেনে নিচ্ছেন সিংহভাগ ভোটার।
এ আসনে উপ-নির্বাচনে জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম ওমর, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনসুর রহমান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের রফিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে মো. মিনহাজ ও সৈয়দ কবির আহম্মেদ লড়াই করছেন। তবে এখনো এসব প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা তেমন নেই।
এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৪ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটাররা তাদের ভোট দেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৯
এমবিএইচ/এনটি