ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সিলেট আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন! 

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০
সিলেট আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন!  ...

সিলেট: সিলেট আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের একজন তপন মিত্র। সিলেটে গুলশান হোটেলে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তিনি।

দেহে স্প্লিন্টার নিয়ে দলকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন তিনি। বিগত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের একজন হলেও প্রস্তাবিত মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তার নাম নেই!

কেবল তপন মিত্র নয়, বিগত দিনে জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে দমন পীড়নের শিকার ও গ্রেনেড হামলায় আহত ত্যাগী নেতাদের নাম নেই কমিটিতে। অনেকের নাম থাকলেও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাদের বাদ দিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বেশ কিছু নিষ্ক্রিয় নেতাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সদ্য সাবেক যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের প্রমোশন দিয়ে কমিটিতে তাদের উপরে রাখা হয়েছে।

ত্যাগী নেতাদের অনেকে জানান, আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও সাবেক নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলয়ের নেতাদের কমিটিতে স্থান হয়নি। অথচ জীবদ্দশায় সাবেক মেয়র মরহুম বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয়েছিল নগর আওয়ামী লীগের।

দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের দেওয়া কমিটি নিয়ে বঞ্চিত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ কারণে পাল্টা কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মহানগরের পাল্টা কমিটি নিয়ে ক্ষুব্দ নেতারা শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের সুবহানিঘাট ইব্রাহিম স্মৃতি সংসদে বৈঠক আহ্বান করেন।

অন্যদিকে, জেলার পাল্টা কমিটির নেতারাও পৃথক বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা। ওই বৈঠক থেকে আরেকটি কমিটি করে ঢাকায় পাঠাবেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, অ্যাডভোকেট শেখ মখলু মিয়া, অ্যাডভোকেট ময়নুল হক, অধ্যক্ষ শামসুল হকসহ কয়েকজন নেতা।

মহানগর কমিটিতে বাদ পড়ার তালিকাটা আরো দীর্ঘ। প্রস্তাবিক পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাম নেই সিরাজুল ইসলাম, সিরাজ বক্স, অ্যাডভোকেট মফুর আলী, তপন মিত্র, তুহিন কুমার দাস, জগদীশ দাস, অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম, ফাহিম আনোয়ার চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন রানা, রাধিকা রঞ্জন হোম চৌধুরী, শাহানারা বেগম, প্রিন্স সদরুজ্জামান, মিছবাউল ইসলাম সুইট, আবরার আহমদসহ আরো কয়েকজন সদস্যের।

এদের মধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও খসড়া কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন তপন মিত্র, জগদীশ দাস, অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম। এছাড়া সিরাজুল ইসলাম, সিরাজ বক্স, তুহিন কুমার দাস, ফাহিম আনোয়ার চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন রানা, মিফতাউল ইসলাম সুইট বিগত দিনে দলীয় কার্যক্রমে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। আর রাধিকা রঞ্জন হোম চৌধুরী, আবরার আহমদ দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির উপ দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছিলাম। সেই ক্ষোভ থেকে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। অনেক নিষ্ক্রিয় ও নতুনদের পদায়ন করা হয়েছে। মন্ত্রী ইমরান আহমদ সাবেক কমিটির সহ সভাপতি ছিলেন। এই কমিটিতে তার নামই দেওয়া হয়নি। অথচ মন্ত্রী-এমপিদের কমিটিতে রাখতেই হয়। মূলত; সাধারণ সম্পাদক তার সমমনাদের রাজনৈতিকভাবে হত্যা করতে চাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা কমিটিতে অবমূল্যায়নকারীরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে এ সব কিছুর বৃত্তান্তসহ ফিরিস্তি জমা দিয়েছি। এছাড়া বিকল্প আরেকটি কমিটিও অচিরেই কেন্দ্রে জমা দেব।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তপন মিত্র বাংলানিউজকে বলেন, রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাম দেওয়া হয়নি। আমরা যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছি তাদের অনেকের নাম বাদ, আর যাদের রাখা হয়েছে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ জন্য বিকল্প কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

এদিকে, কমিটি গঠন করা নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ত্যাগীদের কমিটি থেকে অবমূল্যায়ন বা বাদ দেওয়া হলে কমিটি পুনরায় কাটাছেঁড়া হবে। তাই দলীয় সভানেত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন বঞ্চিত-অবমূল্যায়িত ক্ষুব্দ নেতারা।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা যেভাবে ছিল। আমরা সেভাবেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে প্রস্তাবনা দিয়েছি। এখানে অনেকে অনেক কথা বলছেন, কিন্তু আমরা কমিটিতে ইমেজ সম্পন্ন নেতাদের নাম প্রস্তাব করেছি।

গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হন অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক হন অধ্যাপক জাকির হোসেন। মুজিববর্ষ এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে থমকে যায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া।

অবশ্য সপ্তাহ আগে আ’লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সিলেটসহ পূর্ণাঙ্গ না হওয়া সকল ইউনিটের কমিটি ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এমন নির্দেশনার পর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই কমিটি জমা দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০
এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।