ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গণফোরাম কার?

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
গণফোরাম কার?

ঢাকা: গণফোরামের মালিকানা নিয়ে রশি টানাটানি চলছে দীর্ঘদিন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুর মধ্যে এই দ্বন্দ্ব নতুন করে শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলকে ঘিরে দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুর মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান ওই কাউন্সিলের মঞ্চে উপস্থিত হলে দলটির কতিপয় নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জাতীয় সংসদে যোগ দেওয়ায় সাধারণ সম্পাদক মন্টু কাউন্সিলে উপস্থিত হননি। তিনি মনে করেন, মোকাব্বির খান সংসদে গেছেন ড. কামাল হোসেনের ইন্ধনে। তাকে কাউন্সিলেও আসতে বলেছেন ড. কামাল। একইসঙ্গে ওই কাউন্সিলে মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে দলের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়ায় দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। পরে রেজা কিবরিয়া পদত্যাগ করলেও দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি।

বিশেষ ওই কাউন্সিলের দিন মঞ্চের সামনে গণমাধ্যমে দলটির তৎকালীন প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড. কামাল হোসেন গণফোরামের মালিক নন। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো একক সিদ্ধান্তে গণফোরাম পরিচালিত হলে এসব দলের সঙ্গে তাদের কোনো পার্থক্য থাকবে না। এই দলে ড. কামালের রাজচালাকি চলতে পারে না। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে মোকাব্বির খানকে কাউন্সিলে নিয়ে এসেছেন।

ওই ঘটনার পর থেকে মূলত গণফোরাম দুটি ধারায় পথ চলতে থাকে। এরপর বিভিন্ন সময় দুই পক্ষকে এক করার জন্য বহুবার বৈঠক হলেও এক হতে পারেনি।

বহু দেন দরবারের পর গতবছর (২০২১) ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে একাংশের কাউন্সিলে মোস্তফা মহসীন মন্টুকে সভাপতি ও সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৭সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কাউন্সিলের মাধ্যমে গণফোরাম থেকে বাদ দেওয়া হয় ড. কামাল হোসেনকে। কিন্তু কাউন্সিলের প্রথম পর্বে গণফোরাম মূল অংশের সভাপতি ড. কামাল হোসেন তার পাঠানো লিখিত বক্তব্যে নতুন অংশের সমাবেশকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, আমি সবসময় ঐক্যের কথা বলেছি। আশা করি, গণফোরামের সব নেতাকর্মী ও সমর্থক ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবেন।

ডিসেম্বরে সম্মেলনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য এ অংশটি গত ২৭ জানুয়ারি  নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন এক চিঠিতে তাদের জানায় গণফোরাম কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। যার সভাপতি কামাল হোসেন এবং আ ও ম শফিকুল্লাহ সাধারণ সম্পাদক। তাদের সঙ্গে এ দলের কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন কামাল হোসেন। সে চিঠিতে তিনি বলেন, মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম মূলধারার গণফোরাম নয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মন্টু-সুব্রত।

রিটের শুনানি নিয়ে গত ৮মার্চ বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক  সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের অংশকে কেন নিবন্ধন দেওয়া হয়নি তা জানতে চেয়েছেন। মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম কেন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা কামাল হোসেনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে শনিবার(১২মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম কাউন্সিল ডেকেছে। গত এক সপ্তাহ যাবত ওই কাউন্সিল ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মন্টু-সুব্রতর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।

মন্টু-সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন অংশের তথ্য ও গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু জানান, ১২মার্চ শনিবার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের নামে কাউন্সিল অবৈধ।

তিনি বলেন, বছরব্যাপী প্রস্তুতির পর গত বছর ৩ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেনের সম্মতিতে পার্টির গঠনতন্ত্রের ১০ ও ১১ অনুচ্ছেদের বিধান মতে গণফোরামের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন উক্ত কাউন্সিলের সফলতা কামনা করেন। কাউন্সিলে প্রেরিত লিখিত শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠ করে শুনানো হয়। কাউন্সিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। এরপর বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফরসহ ধারাবাহিকভাবে সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।  

ড. কামাল হোসেনের অংশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আজ শনিবার(১২মার্চ) আমাদের কাউন্সিল হবে। কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করবেন ড. কামাল হোসেন। মন্টু-সুব্রত নেতৃত্বাধীন অংশের নেতারা বিভিন্নভাবে কাউন্সিল বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন তবে তারা সফল হবেন না।

হাই কোর্টের রুলের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাক বলেন, ওই রিটে কাউন্সিল বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। আমাদের কাউন্সিল যথা সময়ে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
এমএইচ/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।