ঢাকা: অতীতের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিকল্প যাতে বিএনপি-জামায়াত না হয় সেজন্য তিনি ১৪ দলের নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের নিজ নিজ দলকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ১৪ দলের প্রধান শেখ হাসিনা জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় পর প্রধানমন্ত্রী ১৪ দল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন।
বৈঠকে ১৪ দল নেতারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের জোর পদক্ষেপ দাবি করেন। আগামীতে সম্প্রদায়িক শক্তি আরও তৎপর হয়ে উঠতে পারে বলেও তারা সতর্ক করেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জানিয়েছেন, গত তিনটি নির্বাচনের মতো আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তার জোট ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ গ্রহণ করবে। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতেই ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে এ নির্বাচনে যাবে। সেজন্য এখন থেকেই ১৪ দলকে তিনি প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সারা দেশে ১৪ দলকে সক্রিয়, সুসংহত ও শক্তি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি এ জোটের দলগুলোকে নিজ নিজ অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করা ও সংগঠিত করতে বলেছেন। এজন্য যা যা সহযোগিতা দরকার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী যেন আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তি না হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের নেতাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করবে, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করবে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে ১৪ দল নেতারা দ্রুত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, যেভাবেই হোক দ্রব্যমূল্যটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তারা উল্লেখ করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক কোটি মানুষকে কার্ডের আওতায় আনা এবং ৫০ লাখ মানুষের জন্য ১০ টাকা দামে চাল কেনার ব্যবস্থার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
গত দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক শক্তি যেসব হামলা করেছে, তাণ্ডব চালিয়েছে কোনোটাই হঠাৎ করেনি, সবই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করেছে বলেও তারা জানিয়েছেন। আগামীতেও সাম্প্রদায়িক শক্তির আরও জোরালো তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করবে বলে ১৪ দল নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং এদের বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে যেটা জানতে পারছি, যেটা ঘটছে সেখানেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ১৪ দলের ২৩ দফার আলোকে অসাম্প্রদায়িক ধারা অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি হেফাজতসহ সাম্প্রদায়িক শক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে নিয়েই আমার দেশ চালাতে হয়। তাদের যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেটাও আমার দেখতে হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে আরও বলেছেন, আপনারা জোটে আছেন, সুযোগ-সুবিধাও পান, আবার সরকারের সমালোচনা করেন। শুধু নিজের দলের অবস্থান ঠিক রাখতে সরকারের এভাবে সমালোচনা করলে সেটার সুযোগ তো অন্যরাও নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
এসকে/আরআইএস