সিলেট: সিলেট তথা বাংলাদেশের প্রাণ-পুরুষ সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য তিনি।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ হিসেবে দেশে-বিদেশে রয়েছে তাঁর যশখ্যাতি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ন্যাস্ত হয় তাঁর ওপরই। কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামলেছেন শক্ত হাতে।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত জীবনের ৮৮ বসন্ত পেরিয়েছেন গত ফেব্রুয়ারিতে। ৮৯ বয়স হলেও বার্ধক্য যেনো তাঁকে তাড়া করতে পারেনি। নানা রোগব্যাধি দেহে বাসা বাঁধলেও মনোবলে এখনো তারুণ্যদীপ্ত।
ইতিহাস-ঐতিহ্যে সচেতন আবুল মাল আব্দুল মুহিত দেশের একজন আলোকিত মানুষ। সততা, ন্যায়নিষ্ঠ থেকে সত্য কথনে জীবন্ত এক কিংবদন্তী তিনি।
ঢাকা চিকিৎসাধীন থাকার পর সম্প্রতি সিলেটে আসলে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জীবনের নানা দিকগুলো আলোকপাত করেন। সিলেটের মানুষের ভালবাসায় পরিতৃপ্ত হয়ে বলেছেন নানা কথা।
এই বয়সেও দেশের অর্থনীতি নিয়ে ভাবেন তিনি। তাঁর ধ্যানে-জ্ঞানে রয়েছে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন সমৃদ্ধি কামনা। এই জীবনে নিজের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তবে প্রত্যাশার থেকে প্রাপ্তিটাকেই দেখছেন বড় করে।
আলাপচারিতায় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি সিলেটের সন্তান। তবে সিলেটের মানুষ, অন্য জায়গার মানুষের তফাৎ দেখি না। সকলে মানুষ, সকলে সমান। আমি একটা অবস্থানে বড় হয়েছেন। তিনি আরেকটি অবস্থানে বড় হয়েছেন। তাতে অনেক পার্থক্য গড়ে ওঠে। সেই পার্থক্য আবার যত দিন যায়, তত বাড়তে থাকে। এই যে পার্থক্যগুলো, এগুলো কিন্তু বিশেষত্ব। এই পার্থক্যগুলো লালন-পালন করা আমাদের কর্তব্য। এই পার্থক্য রক্ষা করতে আমরা বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করি। সব জায়গায় সফল হয়, সব জায়গায় সফল হয় না। তবে সাফল্যের সংখ্যাই বুধ হয় অসাফল্যের সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে বেশি।
তাঁর হাত ধরে সিলেটের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীর অর্থনীতি আগের তুলনায় বিরাট বড়। আগের অর্থনীতির পরিধি ছোট ছিল, এখন অর্থনীতির পরিধি অনেক বেড়ে গেছে। ডিমান্ড ও চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে বর্তমানে আমাদের দেশের অর্থনীতি আছে, সেটা সম্পর্কে প্রত্যাশা অনেক বেশি।
একজন ভাষা সৈনিক হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, ভাষা সৈনিকদের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো পরিকল্পনা দরকার। ভাষা সৈনিকেরা সব সময় সম্মান পাবেন। তাদের অংশগ্রহণ স্বীকার করা, তারা আজীবন সম্মান পেয়ে যাবেন। যেটা আগেও হয়েছে, এখনো হবে। আমাদের যুগে ভাষা সৈনিক হওয়াটা বিশেষ কৃতিত্বের ছিল। এখন এটা মোটেই না। ’
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তেমন কিছু নেই। আমি ওই যুগের মানুষ। সেগুলো আমার অবলম্বন ছিল, আমি অবলম্বন করেছি। ’
কর্মজীবনে আমলা থেকে মন্ত্রী, কোন জায়গাতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেন, বলা খুব কঠিন। তবে সব জায়গাতেই কাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি। যেহেতু মানুষের জন্য কাজ করেছি। তাই সব জায়গা থেকে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি, তৃপ্ত হয়েছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।
অনুজ ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, মোমেনের সঙ্গে তার কাজ নিয়ে মাঝে মাঝে আলাপ হয়। আমার মনে হয়, সে যে পলিসি ফলো করছে, সেটি সঠিক পলিসি। তার কার্যক্রম সফল হোক, সেটাই আমি আশা করি।
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং ভাষাসৈনিক আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের একটি সম্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী, বাবা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ। ১৪ ভাই-বোনের মধ্যে মুহিতের অবস্থান তৃতীয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
এনইউ/এসআইএস