ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য মাস্তানদের মতো: রিজভী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য মাস্তানদের মতো: রিজভী

ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের বক্তব্য বখাটে ও পাড়া-মহল্লার মাস্তানদের মতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে  তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যায় দেশের কী ভয়ংকর অবস্থা! ডিএমপি কমিশনার খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।

বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে গুম খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের বাৎসরিক শিক্ষা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

জেডআরএফের রিহ্যাবিলিটেশন কমিটির সদস্য সচিব ডা. পারভেজ রেজা কাকনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রিহ্যাবিলিটেশন কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ প্রমুখ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটেয়ারী, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, একেএম জহিরুল ইসলাম, শামীমা রহিম, বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, শফিকুল ইসলাম, আসিফ হোসেন রচি প্রমুখ। ঝিনাইদহের মনিরুজ্জামান মিন্টু, ইন্তা মন্ডল ও সিরাজুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের হাতে বৃত্তির টাকা ও পোশাক তুলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় গুম খুনের পরিবারের সদস্যদেরকে সহায়তা দেবে জেডআরএফ।

উল্লেখ্য যে, খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবির বিষয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম শনিবার বলেন, ‘একটি পার্টির খুব সিনিয়র এক নেতা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এর চেয়ে হাস্যকর...। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করে বলেছিলেন, পাকিস্তানের ওখানে কী করছ...। আর এখন সে নাকি বড় মুক্তিযোদ্ধা। আর না বলি। ’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশে চলছে অরাজক অবস্থা। দেশে কোনো সরকারি কর্মকর্তা নেই। সবাই এক ব্যক্তির কর্মচারী। তবে দিন তাদের বেশি নেই। তাদের আসল চরিত্র কখনও কখনও মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। যিনি খালেদা জিয়াকে নিয়ে কথা বলেছেন, তিনি আগে কখনও এমন কথা বলেননি। এখন  সরকারের উচ্ছিষ্টভোগীরা স্বরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। মানুষ চেনার জন্য বেশি কষ্ট করতে হবে না। রাজনীতির চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমাজসেবা। যা জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন করে যাচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ড অন্যদেরও উৎসাহ দেয়। করোনাকালে তাদের হোম হেলথ সার্ভিস খুব ভালো সাড়া ফেলেছে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এগোতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দেশপ্রেম নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তবে তার আত্মা সার্থক হবে।

ডিএমপি কমিশনারের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, শুনেছি যে ওনার (ডিএমপি কমিশনার) এক্সটেনশন হয়েছে। আবার পরবর্তীতে এক্সটেনশন নেওয়ার জন্যই কি? শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য এ কথাগুলো বলেছেন? আমলাদেরকে বলা হয় একটি রাষ্ট্রের স্টিল ফ্রেম। আর সেই স্টিল ফ্রেম আজকে দেখছি একেবারে গদগদ হয়ে প্রশংসা করছে একটি অবৈধ সরকারের। আর সেটি করতে গিয়ে সভ্যতা, ভব্যতা, সুরুচি সবকিছুকে জলাঞ্জলি দিয়ে বখাটে পাড়া-মহল্লার মাস্তানরা যেভাবে কথা বলে সেভাবেই পুলিশের এক বড় কর্মকর্তার মুখ থেকে যদি এমন কথা বের হয় তাহলে এটা কত বড় ন্যক্কারজনক হতে পারে।

তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন তার চেহারা কেমন এটা যদি আপনারা বুঝতে চান তাহলে দেখতে হবে ওই রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বৈশিষ্ট্য কেমন? এটা দেখলেই রাষ্ট্রের চরিত্রটা বোঝা যায়। আজকে দেখুন বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কথাবার্তা তাদের আচার-আচরণেই বুঝতে পারবেন এই রাষ্ট্র কী ভয়ঙ্কর! আজকে দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের এক কর্মকর্তা যার নিরপেক্ষ ও চুপচাপ থাকার কথা; তিনি যে কথা বলেছেন শনিবার এটা আমার কাছে মনে হয়েছে এই রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নেই। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে চাকরি জীবনে অনুকম্পা পাওয়ার আশায় সভ্যতা-সংস্কৃতি সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ডিএমপি কমিশনার এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও আপত্তিকর। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রিজভী বলেন, যিনি স্বাধীনতার ঘোষক ও বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিণী সেই নেত্রী সম্পর্কে যে অশ্লীল অসভ্য কথাবার্তা বলেছেন ডিএমপি কমিশনার। আমার কাছে মনে হয়েছে শেখ হাসিনা যেমন তার বিরোধী শক্তিকে আক্রমণ করতে কোনো ধরনের সভ্যতার যে পরিসীমা সেটা যেমন মানেন না, ঠিক একই ভাষায় কথা বলেছেন ডিএমপি কমিশনার। এটা হাছান মাহমুদ, ওবায়দুল কাদের বললে এক কথা ছিল। এই কমিশনার তো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালিনও চাকরি করেছেন।

মানবসেবার জন্য জেডআরএফের প্রশংসা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা যা করছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদেরকে সহায়তা করছে। গরিব- মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যিনি তার বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মানবিক কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তার নির্দেশে মহামারি করোনাকালে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন যা করেছে তা দৃষ্টান্তমূলক। আসলে রাজনীতি হওয়া উচিত মানবকল্যাণে। সেটাই করে যাচ্ছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ২৭মার্চ, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।