ঢাকা: খালেদা জিয়াকে নিয়ে পুলিশের আইজিপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের মুখে এমন বক্তব্যে আমরা ক্ষুব্ধ, বিষ্মিত। মনে করবেন না আওয়ামীলীগই শেষ, অবশ্যই পরিবর্তন হবে এবং আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে, কেউ পার পাবে না।
সোমবার (২৮মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার (২৬ মার্চ) পুলিশের একটা অনুষ্ঠানে আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনার কিছু কথা বলেছেন। আমরা বিষ্মিত হয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি। কী করে তারা সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক, অশালীন এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা বলতে পারেন। তা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। এই জায়গায় নিয়ে এসেছে আওয়ামীলীগ সরকার, যে সরকারি কর্মকর্তা যাদের রাজনৈতিক কথাবার্তা বলা একেবারেই কনডাক্টের বাইরে, সেখানে তারা একজন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর রাজনীতি করছেন, এখনও গণতন্ত্রের জন্য গৃহবন্দী হয়ে আছেন, তার সম্পর্কে এ ধরনের অশালীন উক্তি করতে পারেন। এটা আমরা ভাবতেও পারিনি। এটা চিন্তাও করা যায় না। আমি ভাবতেও পারিনি যে, এরা শিক্ষিত মানুষ। বড় পদে আছেন, তাদের মুখ থেকে এ ধরনের কথা কীভাবে আসে?
তিনি বলেন, আমি রোববারও (২৭ মার্চ) বলেছি যে, আপনারা মনে করবেন না আওয়ামীলীগই শেষ। অবশ্যই পরিবর্তন হবে এবং সেই পরিবর্তনে এই জবাবদিহিগুলো আপনাদের করতে হবে। সরকারের বেআইনি হুকুম তামিল করছেন। এটা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এতে আনন্দিত হয়েছে তা নয়, লজ্জিত হয়েছে। আমরা লজ্জিত যে আমাদের একটা প্রতিষ্ঠানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কেন দিয়েছে? মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য। মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, মানুষকে গুম করা, খুন করা বিনা বিচারে হত্যা ও অন্যায়ভাবে অত্যাচার করার জন্য। এই নিষেধাজ্ঞায় প্রধানমন্ত্রী কষ্ট পেয়েছেন। আমরাওতো কষ্ট পেয়েছি, কেন দেওয়া হলো। আপনারাইতো নির্দেশ দিয়েছেন মানুষকে খুন করার জন্য। আপনারাই গুম করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যে কারণে সরকারি কর্মকর্তারা বাধ্য হয়ে অনেকে এ কাজ করেছেন। আমি বলতে চাই, বেআইনি হুকম মানবেন না, তাহলে ওই অবস্থায় পড়তে হবে। হিসেব একদিন দিতেই হবে। না দিয়ে কেউ পার পাবেন না।
‘যারা সরকারের উন্নয়ন দেখেন না তাদের চোখের চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী’- এর জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, চোখের চিকিৎসাতো তখনই করানো সম্ভব যদি সেই ধরনের কোনো হাসপাতাল থাকে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যাওয়াই যায় না। আর বড় হাসপাতাল যেগুলো আছে সেখানে সাধারণ মানুষ অ্যাফোর্ট করতে পারে না। উনি আমাদের লক্ষ্য করে বলেছেন, আমরাতো অ্যাফোর্ট করতেই পারি না। গত ১৪/১৫ বছর যাবত আমাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি- সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান এটা নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এখন দেশের প্রতিটি মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে যে আওয়ামীলীগ কি জিনিস। আওয়ামী লীগের রসায়নই হচ্ছে দুর্নীতি। তারা যেখানেই যাক দুর্নীতির বাইরে যেতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সবচেয়ে বড় সমস্যার মধ্যে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তারা না পারে বলতে, না পারে সইতে। একজন সাধারণ মানুষ যার তিন বেলা খাবার ঠিকমতো জোটে না, তাকে যদি বলেন মাথাপিছু আয় বেড়েছে, তাহলে তার কেমন লাগবে?
‘আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি’ শীর্ষক এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাবের সহ সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু।
মূল প্রবন্ধে দ্রব্যমূল্যের তুলনা করে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে মোটা চালের কেজি ছিল ১৭ টাকা, সেটা এখন ৫০ টাকা। চিকন চাল ছিল ২৪ টাকা, যা এখন ৭৫ টাকা। আটা ছিল ১৮ কেজি টাকা, বর্তমানে ৪৫ টাকা কেজি।
এছাড়াও অন্যান্য সব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, অ্যাবের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী হাসিন আহমেদ, আরব আমিরাত বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অ্যাবের সহ সভাপতি আশরাফ উদ্দিন বকুল, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, প্রকৌশলী সুমায়েল আহমেদ, আবদুল হালিম, মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম, আসাদুজ্জামান চুন্নু, একেএম জহিরুল ইসলাম, বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, কাজী সাখাওয়াত হোসেন, ফখরুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, আসিফ হোসেন রচি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২/আপডেট: ২২৪৫ ঘণ্টা
এমএইচ/এমএমজেড/এএটি