সিলেট: মেগা উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ মেগা দুর্নীতি করে লুটপাটের টাকা কানাডার বেগমপাড়ায় পাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এ দেশে কী করেছে আওয়ামী লীগ? ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু লুট করতে করতে ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, যে নেত্রী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছিলেন; ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করেছিলেন; সেই নেত্রীকে গৃহবন্দি করে রেখেছে মিথ্যা মামলা দিয়ে। কারণ একটাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বেরিয়ে আসলে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো মানুষ বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, যে নেত্রী হিজাব পরে ১০টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর কথা বলেছিল, খাইয়েছে? চালের কেজি এখন ৬০/৭০ টাকা। বিনা পয়সায় সার দেওয়ার কথা, দিয়েছে? ইউরিয়া সারের দাম ১২শ টাকা। দ্রব্যমূল্য এখন বেড়েছে। মানুষের নাগালের বাইরে। যারা সরকারে আছে, তারা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন যার স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল, তখন তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে ভেসে উঠেছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা। যার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। মহান নেতা জিয়াউর রহমান তার দর্শন দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সব দেশপ্রেমিক দলকে নিয়ে বিএনপি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য, সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, সে সময় ইউলিয়াম মাইলাম ছিলেন বাংলাদেশের মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি তার বইয়ে লিখেছিলেন, যদি ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হতেন, তাহলে বাংলাদেশ হতো আফগানিস্তানের মতো। আমরা সেই নেতার আদর্শে চলি যিনি কেবল সৈনিক, নেতা ছিলেন না, তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলেছিলেন। আমরা অন্য কোনো জাতীয়তার কথা বলি না, আমরা অন্য কোনো নেতার কথা বলি না, আমরা আমাদের নেতার কথা বলি। তিনি সব শ্রেণির লোকজনকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের চিন্তা করেছিলেন। এখানে কেবল বাঙালি নয়, অন্যান্য জাতি, উপজাতি, ধর্মের লোক বাস করে। তাই এটা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের চিন্তা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য আলাদা। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার অববাহিকতায় যে ভূখণ্ড, সেই ভূখণ্ড আমরা। পশ্চিম বাংলা, মেঘালয়, ত্রিপুরা নই। আমরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী। আমাদের অস্তিত্বে এটা হিসেবে রাখতে হবে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে যে স্বপ্ন দিয়ে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন। যারা স্বাধীনতা দেখেননি, তারাও আছেন। স্বাধীন দেশের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাই। যাতে আমরা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজকে পরিচালনা করতে পারব, চিন্তা-ভাবনাগুলোকে আমরা বিকশিত করতে পারব। একটা সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। যেখানে আমাদের কথা বলার অধিকার থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, যুদ্ধের পর থেকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধের নাম করে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
এ সম্মেলন ও কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করছেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীদার। সম্মেলন ও কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ, সহ-ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বগুড়া পৌরসভার মেয়র ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. রেজাউল করিম বাদশা, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী প্রমুখ।
দলীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলে জেলার আওতাধীন ১৮ ইউনিটের ১ হাজার ৮১৮ জন ভোটার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ২৯ মার্চ, ২০২২
এনইউ/এমএমজেড