ঢাকা: নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দীর্ঘদিন পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এক টেবিলে বসলেন। ইফতারপূর্ব আলোচনায় বিরোধী জোটের নেতাদের অভিন্ন বক্তব্য ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, বিধায় এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর শান্তিনগরে হোয়াইট হাউস রেস্টুরেন্টে ‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচনকে না বলুন’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের নেতাদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার তো অবৈধ। তাদের অধীনে নির্বাচন শুধু না, এখন বলতে হবে- এই সরকার আর নয়। আসুন সরকারকে বিদায়, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক কাতারে সামিল হই। ভবিষ্যতে আলোচনার মাধ্যমে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
সভায় আ স ম আবদুর রব বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচন করা যাবে না। আপনারা অবৈধ। ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে হবে। ভোট চুরি করেছিলেন কেন? রাতের আগে ব্যালট বাক্স ভরাট করেছেন কেন? সেটার জবাব আগে দেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। আন্দোলনের মুখে এই সরকার পাঁচ মিনিটও টিকবে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফ্যাসিজমের হাত থেকে রেহাই পেতে জাতীয় ঐক্য দরকার। আমরা বিশ্বাস করি সবাইকে এক সঙ্গে পাবো। ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রটাকে তছনছ করছে। এটাকে বাঁচাতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশ সত্যিই ভীষণ বিপদের মুখে। সবাই ঐক্যবদ্ধ না হলে আরও ভয়াবহ হবে। তবুও সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের সামনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য তুলে ধরে সরকারকে বদলিয়ে পরিবর্তিত সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাতে হবে। জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঠিক করতে হবে। সেটা কি নির্বাচনের আগে নাকি পরে হবে?
সভায় বিকল্প ধারার একাংশের সভাপতি অধ্যাপক নূরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, দেশে যখন নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ ঠিকমতো কাজ করে না তখন দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা এমন বিপদে পড়বে যে আমরা সবাই বিপদে পড়ে যাবো। আমাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। বেশি দিন লাগবে না। অল্প কিছুদিন আন্দোলন করলে সরকারের পতন হবে।
সভায় এলডিপির একাংশের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন দেশের কেউ চায় না। আমরা বিএনপির আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করেছিলাম। কিন্তু এই সরকার তা বাতিল করেছে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাই। আজকে জাতীয় সরকারের ফর্মূলা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বা তার দোসরদের নিয়ে জাতীয় সরকার হতে পারে না। কাঁদা ছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ হবে জাতীয় সরকারের ফর্মূলা কী হবে?
সভায় এলডিপির অন্য অংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ সরকার না জাতীয় সরকারের অধীনেও নির্বাচন করা যাবে না। তীব্র আন্দোলনের মুখে এই সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর বাইরে কেউ অন্য কিছু চিন্তা করলে বুঝতে হবে সেই চিন্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার চিন্তার মিল আছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে ও সাকিব আনোয়ারের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির আবু তাহের, গণ অধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়া, ভিপি নূরুল হক নূর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে ইফতারে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, শওকত মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও তার সহধর্মিণী নাসিমা খান, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, শামা ওবায়েদ, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাঁতী দলের কাজী মনিরুজ্জামান মনির, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
এমএইচ/আরআইএস