বরিশাল: বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে বরিশাল শহরে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া ও মিছিল করেছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ। যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করার লক্ষে মিছিল করেছেন বলে দাবি করেছেন ছাত্রলী ও শ্রমিক লীগের নেতারা।
বিএনপির সমাবেশের মাত্র তিনদিন আগে ক্ষমতাসীনদের মোটরসাইকেল মহড়াকে কেন্দ্র করে বরিশালের রাজপথে নতুন করে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। যদিও এর আগেই বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশালে বাস ও থি-হুইলার ধর্মঘটের ডাক দিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট বাস ও থ্রি হুইলার মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা।
বুধবার (০২ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বরিশাল সদর, বানারীপাড়া, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার অভিযোগ তুলেছেন। সেই সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও যোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে বেলা ১২টার দিকে নগরে বিক্ষোভ করেছে জেলা যুবদল।
তবে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করলে কোনো ধরনের অসুবিধা দেখছেন না তারা।
বুধবার বিকেলে বরিশাল নগরের প্রধান প্রধান সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেন মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর নেতৃত্বে ছিলেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্না। মিছিলের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন সদর রোডে কিছু সময় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, আগামী ১১ নভেম্বর যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী সফল করতে প্রস্তুতি হিসেবে বরিশাল নগরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার বিকেলে বরিশাল নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নার নেতৃত্বে ৩০টি ওয়ার্ড ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্না বলেন, আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির প্রোগ্রাম রয়েছে। সন্ত্রাসী বাহিনীর এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে আনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা চাই যেন কোনো জায়গায় বিশৃঙ্খলা না হয়। এটি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ভাইয়ের হাতে গড়া শান্তির নগর। আমরা চাই নগরে শান্তি বিরাজ করুক। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।
এর আগে দুপুরে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে সদর রোড থেকে মিছিল বের হয়ে নগরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়, ঢাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা মিছিল করেছি।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর বরিশাল নগরজুড়ে মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদেরও দাবি ছিল ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব সফল করার লক্ষ্যে মিছিল করেন তারা।
বরিশাল নগরের হোটেলে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ
তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যি সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, বরিশালে বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে শোডাউন দেওয়া হচ্ছে বরিশালে। গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর গড়িয়ারপাড় এলাকায় লিটন মোল্লার নেতৃত্বে শোডাউন নিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক মীর সাদসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ইতোমধ্যে উজিরপুর, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার অবস্থাও অত্যন্ত ভয়াবহ।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যার পরে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের একাধিক আবাসিক হোটেলে তল্লাশি চালানোর খবর পাওয়া গেছে। নগরের পোর্ট রোডস্থ হোটেল রোদেলাতে তল্লাশি চালাতে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা দাবি করেছেন, তারা সেখানে বসে খেলা দেখছিলেন।
অন্যদিকে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বিপ্লব কুমার মিস্ত্রী জানান, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে বিএনপির দাবি সমাবেশ ভণ্ডুল করতে পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে হোটেলে অভিযান চালাচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইন-শৃঙ্খলার জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেছেন তারা (বিএনপি)। আমরা সেটি দেখবো বলেছি। সেই সাথে সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি পালন করলে কোনো বাধা নেই। তারা যদি মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এ কথা মৌখিকভাবে বলে দিয়েছি, তারাও আমাকে কথা দিয়েছেন শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে কর্মসূচি করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২২
এমএস/এমজেএফ