ঢাকা: চলতি বছরের জুন শেষে ১০টি ব্যাংক প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক আর বেসরকারি ছয়টি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ৫ হাজার ২৪১ কোটি ৫১ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৩১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৪০১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ও বিডিবিএল-এর ঘাটতি ২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা।
প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৭০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪৪৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ৩২৭ কোটি ৯ লাখ টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৫০৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ১৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৯১ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
প্রভিশন হলো ব্যাংকের মুনাফা থেকে রাখা খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি। সাধারণ ঋণ ও খেলাপি ঋণ ভেদে এক শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ, ৫০ শতাংশ ও শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। খেলাপি ঋণ তিন ধরনের। সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা প্রাথমিক মানের খেলাপি ঋণ, ডাউটফুল বা মধ্যম মানের খেলাপি ঋণ এবং ব্যাড-এন্ড লস বা মন্দমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে এসব প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যা মেয়াদি কোনো খাতে ঋণ বিতরণ করা যায় না। এর ফলে মুনাফা করার পরও প্রভিশন রাখার কারণে ব্যাংক এসব অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে না। ফলে মুনাফা করতে পারে না। প্রভিশন ঘাটতিকে ব্যাংকের দুর্বলতার স্মারক হিসেবে বিবেচনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিকের আট হাজার ২৫৬ কোটি খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার কথা পাঁচ হাজার ৭৭৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ব্যাংকটি রেখেছে ৫৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বিডিবিএল-এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রভিশন রাখার কথা ৩২৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ব্যাংকটি রেখেছে ৩০৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
অগ্রণীর খেলাপি ঋণ ২১ হাজার ৩২৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রভিশন রাখার কথা ১১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ৪৩ লাখ। ব্যাংকটি রেখেছে ছয় হাজার ৫৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৪৬৩ কোটি ৩৩ লাখা টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন রাখার কথা ৬ হাজার ৩৫৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ব্যাংকটি রেখেছে ১ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৯২৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংটির প্রভিশন রাখার কথা ১৬ হাজার ৫৮৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ব্যাংকটি প্রভিশন রাখতে পেরেছে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন রাখার কথা ৮১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ব্যাংকটি রেখেছে ৩৭২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
ঢাকা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৩৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। প্রভিশন রাখার কথা ২ হাজার ১৪৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। ব্যাংকটি রাখতে পেরেছে ১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।
আইএফআইসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রভিশন রাখার কথা ২ হাজার ৪৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ব্যাংকটি রাখতে সমর্থ হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
সাউথইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন রাখার কথা ৩ হাজার ৩২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। রেখেছে ৩ হাজার ১২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৪৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন রাখার কথা ৯৯৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ব্যাংকটি প্রভিশন রাখতে সমার্থ হয়েছে ৬০২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে প্রভিশন ঘাটতিও, যা ব্যাংককে দুর্বল করেছে।
আরও পড়ুন:
কোন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কত
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ