ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ পৌষ ১৪৩১, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ রজব ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় সহজে মিলছে না বাংলাদেশের ভিসা, বন্ধ মাল্টিপল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
কলকাতায় সহজে মিলছে না বাংলাদেশের ভিসা, বন্ধ মাল্টিপল কলকাতায় বাংলাদেশের ভিসার জন্য অপেক্ষমান আবেদনকারীরা

কলকাতা: ভারতীয়দের জন্য বাংলাদেশ যাওয়ার ভিসায় এসেছে আরও জটিলতা। আগের মত সহজে মিলছে না বাংলাদেশের ভিসা।

শীতের মধ্যে ভোর থেকে লাইন দিয়েও ভিসা আবেদন জমা দিতে পারছেন না কলকাতাবাসী। ভিসা জমা দিতে না পারায় দিনে শতাধিক মানুষ ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ভিসা যেনো এখন লটারি সিস্টেম! যত আগে আসা, তত আগে জমা। স্লট শেষ হলে জমাও বন্ধ। এমনই পরিস্থিতি এখন কলকাতার ভিসা সেন্টারে।

এর আগে তো এমনটা হয়নি। তাহলে এখন কেন এই জটিলতা? এই নিয়ে আবেনকারীদের ক্ষোভ বাড়ছে কলকাতায়। তার উপর এই নিয়ে কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না কলকাতার বাংলাদেশ মিশন।

কলকাতার বাংলাদেশ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের কর্মযজ্ঞ শুরু স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে। কিন্তু বর্তমানে এই হাঁড় কাপানো শীতে লাইন পড়ছে ভোর ৫টা থেকে। যা নজিরবিহীন। এর আগে এমন লাইন পড়ত না। মানুষ যাতে সুষ্ঠু ভাবে ভিসা নিতে পারে তার জন্যই ২০২১ সালে পৃথকভাবে খোলা হয়েছিল ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার। কিন্তু তারপরও চলমান পরিস্থিতিতে কয়েকশো মানুষের লাইন পড়ছে।

সকাল ৬টায় ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার জন্য লাইন দিয়েছিলেন রাজেশ সরকার। শীতের ছুটিতে পরিবারের ৬ জন একসঙ্গে ঢাকায় আত্মীয় বাড়ি যাবেন। দেখবেন কক্সবাজার ইত্যাদি। দীর্ঘ সময় লাইন দিয়ে সকাল ১০টা পৌঁছায় কাউন্টারের সামনে। কাউন্টার থেকে বলে দেওয়া হয়, ৫টা পাসপোর্টের বেশি জমা নেওয়া যাবে না। পরিবারে কাকে কলকাতায় ফেলে ঢাকায় যাবে? এই ক্ষোভে ভিসাই জমা দেননি রাজেশ।  

একই ক্ষোভ নদিয়ার বাসিন্দা নিখিল চক্রবর্তীর। মঙ্গলবার(৩১ ডিসেম্বর) দীর্ঘ সময় লাইন দিয়েও আবেদন জমা দিতে পারেনি। ভিসা সেন্টার থেকে তাকে বলা হয়, আজকের শ্লট শেষ। তাই জমা নেওয়া যাবে না। পরদিন আসুন। এরপরই নিখিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নদিয়া থেকে ভিসা সেন্টারে আসতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। তারপর এখানে ৩ ঘণ্টা লাইন। এতশতের পরও শ্লট না থাকার কারনে জমা দিতে পারিনি। রোজ আসা সম্ভব নয়। তাই এবারের মত পরিবার নিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিখিল।

ভিসা সেন্টার জানাচ্ছে, তাদের কিছু করার নেই। বাংলাদেশ সরকারের তরফে প্রতিদিনের জন্য নির্দিষ্ট শ্লট ঠিক করা আছে। তার বাইরে চলে গেলে কি করা যাবে! তাই এই সমস্যা।

তথ্য বলছে, ৫ আগস্টের আগে কলকাতার মিশন থেকে দিনে হাজারর বেশি আবেদন জমা পড়ত। প্রতিদিন গড়ে কমবেশি ৫০০ মত ভারতীয়রা, বাংলাদেশের ভিসা পেয়ে থাকতো। এটা মৌসুম বা উৎসবে সাতশো ছাড়িয়ে যেত। এরপর চিন্ময়ের গ্রেপ্তার এবং গত ২ ডিসেম্বর, ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলা। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থানরত পরপর সবকটা বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ ভিসার সংখ্যা এখন ১০০-র নিচে নেমে গেছে। জানা যায়, এই মুহূর্তে ভারতীয়দের জন্য মাল্টি্পল ভিসা বন্ধ। সকলকে দেওয়া হচ্ছে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা। তাও নির্দিষ্ট শ্লট অনুযায়ী।

তাহলে কি, যে ভাবে না বলে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা দেওয়া সীমিত করেছে, সেই পথেই হাটছে কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশ মিশন? যে কারণে ভিসা পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গবাসী? প্রশ্ন এখন জোড়ালো হচ্ছে।

২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, কলকাতার সল্টলেক লাগোয়া বিধাননগর সেক্টর ফাইভে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল বাংলাদেশ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ভিসা সংক্রান্ত কাজ করছে ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের কাজ সবকিছু দেখে নিয়ে, ৮২৫ রুপি প্রসেশিং ফি’র বিনিময়ে, সংশ্লিষ্ট জনের আবেদন ও পাসপোর্ট জমা নেওয়া। ব্যাক্তিটিকে দেওয়া হয় টোকেন। পাসপোর্ট চলে আসে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে। সেখানে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা ঠিক করেন কাকে কতদিন ভিসা দেওয়া হবে। এই পদ্ধতিতেই ভারতীয়রা কলকাতা থেকে পেয়ে থাকেন বাংলাদেশের ভিসা।

কিন্তু তারই মধ্যে তৈরি হয়েছে জটিলতা। ত্রিপুরায় ভিসা অফিস বন্ধ। হাইকমিশনার না থাকায়, দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন একপ্রকার অচল। গুয়াহাটি, মুম্বাই, আগারতলা, কলকাতার মত দূতাবাসের দায়িত্বরত প্রধানদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দূতাবাস একপ্রকার অচল থাকায় কলকাতায় ভিসা সেন্টারে চাপ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে সেখানকার স্থানীয় সূত্র বলছে, আগের থেকে বাংলাদেশ ভিসা অনেকটাই সীমিতকরণ করা হয়েছে। আগের মত অতি সহজে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে দীর্ঘ লাইন। তার উপর আগরতলা বন্ধ হয়ে যেতে গত কয়েকদিনে অতিরিক্ত দালাল চক্র সক্রিয় হয়েছে কলকাতায়। লম্বা লাইনের ঝক্কি এড়াতে দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন অনেকেই। যে কারণে সাধারণরা ভিসা জমা দিতে পারছে না। দালালরাই সেই সীমিত শ্লট পূর্ণ করে দিচ্ছে। তাতেই বিপাকে পড়ছেন দালালে নারাজ ভিসা আবেনকারীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বরর ২০২৪
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।