ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধই থাকছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধই থাকছে

ঢাকা: দেশের ২০টি কোম্পানির সকল ধরনের ওষুধ উৎপাদন বন্ধই থাকছে। মানসম্মত ওষুধ উৎপন্ন না করায় এ সকল কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ১৪টি কোম্পানির সকল ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনও বন্ধ থাকবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এ রায় দেন।
 
উৎপাদন বাতিল হওয়া ২০টি ওষুধ কোম্পানি হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করা ১৪টি কোম্পানি হলো, আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।
 
তবে এর মধ্যে আদ-দ্বীন, এভার্ট, এমএসটি কোম্পানি আদালতকে অবহিত করেছিলো যে, তারা জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) পেয়েছে। এ কারণে ওষুধ প্রশাসনের কাছে জিএমপি’র বিষয়ে তাদের করা আবেদন যাচাইয়ের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ কমিটির একজন প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন প্রতিনিধি ও ওষুধ প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গত বছরের ০৫ জুন রিট আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

ওইদিন মনজিল মোরসেদ জানান, ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এ কমিটিতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মো.সাহাবুদ্দিন কবীর চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী।

এ বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে গত বছরের ০১ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। যাতে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া ২০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা ছাড়াও ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়েটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল চান তদন্ত কমিটি।

কিন্তু ওই সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় রিট আবেদনটি করা হয় বলে জানান মনজিল মোরসেদ।

এরপর গত বছরের ০৭ জুন ওই ৩৪ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের আদেশ দেন হাইকোর্ট । সাতদিনের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালককে বলেছিলেন আদালত।

এছাড়াও আদালত রুল জারি করেন। এসব কোম্পানির উৎপাদন বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং লাইসেন্স বাতিলে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চান হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক, র্যাবের মহাপরিচালক ও ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।      

পরে অবশ্য মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করে।

এরপর ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড ও এমএসটি ফার্মা’র পক্ষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন জানানো হয়। চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত গত বছরের ১৩ জুন শুনানি শেষে এ আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন এবং ১৫ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন।  

শুনানি শেষে ১৫ জুন হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

এরপরও দৈনিক পত্রিকায় ‘মানহীন ৩৪ কোম্পানির ওষুধ এখনও বাজারে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন রিটকারী পক্ষ। এ আবেদনে সাড়া দিয়ে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০ ওষুধ কোম্পানি ও অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদনকারী ১৪ কোম্পানির যেসব ওষুধ এখনও বাজারে আছে তা দ্রুত বাজার থেকে প্রত্যাহারে গত বছরের ০৮ আগস্ট নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এরপর এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয় গত ৩১ জানুয়ারি।

রায়ের পরে মনজিল মোরসেদ জানান, যে সকল ওষুধ কোম্পা‍নির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিলো তা বহাল রাখেন এবং যে সকল কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে তা বহাল রেখেছেন আদালত। এছাড়া ওষুধ কোম্পানিগুলোকে মনিটর করে প্রতি তিন মাস পর পর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩,২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।