ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বিচারকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা আমলে নিয়েছেন আদালত 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
বিচারকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা আমলে নিয়েছেন আদালত 

রংপুর: রংপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনে স্ত্রীর মামলার আবেদনের পর তা আমলে নিয়েছেন আদালত।  

রোববার (২৪ এপ্রিল)  দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১- এর বিচারক মোস্তফা কামাল মামলাটি আমলে নেন।

এ সময় বাদী আদালতে উপস্থিত থেকে জবানবন্দি দেন।

এর আগে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে বিচারকের স্ত্রী ডা. হৃদিতা সরকার বাদী হয়ে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২- এ মামলার আবেদনটি করেন। বিচারক ছুটিতে থাকায় আজ আদালত-১ এ শুনানি করা হয়।

এতে তার স্বামী ছাড়াও আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।  মামলার আসামিরা হলেন- দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), বাবা সুধাংশু কুমার সরকার চয়ন (৬০), ফুফাতো ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকার (৫০)। সবার ঠিকানা ময়মনসিংহরে হালুয়াঘাট উপজেলা।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ মে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার হালুয়াঘাট পূর্ব বাজার এলাকার সুধাংশু কুমার সরকার চন্দনের ছেলে দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের নারায়ন সরকারের মেয়ে হৃদিতা সরকারের বিয়ে হয়।

ওইদিন বিয়ের আসরে বর দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পরিবার নগদ কনেপক্ষের কাছে ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় হিন্দু আইনে বিয়ে সম্পন্ন হয়। কনের বাবা বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল (উপহার সামগ্রী) বরপক্ষকে দেন। বিয়ের কয়েক মাস পার না হতেই দেবাংশু কুমার সরকার নেশাগ্রস্ত হয়ে নতুন একটি প্রাইভেটকার কেনার জন্য তার স্ত্রী হৃদিতা সরকারের ওপর ৩০ লাখ টাকার চাপ সৃষ্টি করেন।  কিন্তু হৃদিতা সরকার তার বাবার অক্ষমতার কথা জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও থেকে নেত্রকোনা হয়ে রংপুর জজশিপে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করলেও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পরকীয়া ও মাদক সেবনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন দেবাংশু কুমার সরকার।  

স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে সন্তানের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে আসামি দিন দিন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। অবশেষে প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাবি করা যৌতুকের টাকা না পেয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসামি দেবাংশু কুমার সরকার।  

বিষয়টি জানাজানি হলে দেবাংশু ৩০ লাখ টাকা ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হৃদিতা সরকারের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানান। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৮ মার্চ হৃদিতা সরকার তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে রংপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে উপস্থিত হলে তার ওপর অজ্ঞাত কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালায়।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ২১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ১৭ এপ্রিল রংপুর কোতোয়ালি থানায় এজাহার করতে গেলে আসামি বিচারক হওয়ায় থানা থেকে মামলা নথিভুক্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করলে আদালতের শরণাপন্ন হন হৃদিতা সরকার।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খন্দকার রফিক হাসনাইন বলেন, বাদী রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নালিশি মামলার আবেদন করলে শুনানি শেষে আমরা মামলার আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।