নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা রঞ্জিত দেবনাথ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিজারিয়ান অপারেশন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মারা গেছেন একাধিক রোগী।
তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান।
ডিমলা উপজেলার মেডিনোভা ক্লিনিকে কয়েকদিন রঞ্জিত ও ক্লিনিকের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পরিচয়দানকারী জাহাঙ্গীর আলম মিলে এক রোগীর অস্ত্রোপচার করেছেন। সেখানে ছিল না কোনো অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ও নার্স।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেনকে জানালে, তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ইউএনও বেলায়েত হোসেন অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেন।
মেডিনোভা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হর্ষবর্ধন বলেন, রঞ্জিত আমার প্রতিষ্ঠানে সার্জনের সহকারী হিসেবে অপারেশনে অংশ নেন। তবে রঞ্জিতের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কিছু জানি না। রঞ্জিত উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়মিত কাজ করেন। তাই আমরাও কাজ করাই।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে মেডিনোভা ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রঞ্জিত দেবনাথ জেলার জলঢাকা উপজেলার খেরকাটি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন খেরকাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে। কয়েক বছর অফিস সহায়ক ও ওটি বয় হিসেবে ডোমারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ করেন। বর্তমানে ডোমারে সেভেন স্টারসহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে তাঁর মালিকানা রয়েছে।
জেলার কয়েকটি ক্লিনিকের পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ক্লিনিকে কখনো সার্জারির ডাক্তার, কখনো সহকারী সার্জন পরিচয়ে কাজ করেছেন রঞ্জিত। নিজেকে তিনি চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রও লিখে দেন। তাঁর অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মারাও গেছেন একাধিক রোগী। এর মধ্যে অন্যতম জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের সবুজপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী মেঘলা বেগম (২০)। এ ঘটনায় রঞ্জিতকে আসামি করে ডোমার থানায় হত্যা মামলা করেন রবিউল ইসলাম। মামলাটি এখনো নীলফামারী আদালতে বিচারাধীন।
ডোমার ফ্রেন্ডস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক কমল দেবনাথ জানান, ‘রঞ্জিত তাদের ক্লিনিকে প্রথমে অফিস সহায়কের কাজ করতেন। কয়েক বছর এখানে কাজ করেছেন। পরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
ডিমলা লাইফ কেয়ার হসপিটালের ওটিবয় ময়নুল বলেন, ‘রঞ্জিত আগে এখানে অস্ত্রোপচার করতেন। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানতে পারে তাঁর ডাক্তারি কাগজপত্র নেই। এরপর থেকে তিনি আর আসেন না। ’
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে রঞ্জিত দেবনাথ বলেন, ‘ওটিবয় হিসেবে ডাক্তারদের সঙ্গে কাজ করতে করতে অস্ত্রোপচার শিখেছি। কোনো ডাক্তার বা ক্লিনিক ডাকলে সহকারী হিসেবে কাজ করি। তবে আমার কোনো ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
আরএ