লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। কাজ শুরু হয়ে কয়েকদিনের মাথায় আবার থমকে যায়।
সম্প্রতি আবারও শুরু হয় নদীর তীরবর্তী জিও ব্যাগ ড্রাম্পিংয়ের কাজ। তবে নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে উপকূলীয় নদী ভাঙা লোকজনের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির গাফিলতিকে দায়ী করছেন। এক বছর পার হলেও বিভিন্ন সংকট দেখিয়ে বাঁধের কাজ তেমন একটা এগোতে পারেনি।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) বাঁধের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যান লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় নুরুল আলম বেপারী নামে এক ব্যক্তি বাঁধ নির্মাণ কাজের তদারকিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কথা সংসদ সদস্যের কাছে তুলে ধরেন।
সংসদ সদস্যকে তিনি জানিয়েছেন, বাঁধে জিও ব্যাগ ড্যাম্পিংয়ের সময় পাউবোর দায়িত্বশীল কেউ উপস্থিত থাকে না। ফলে ঠিকাদারের লোকজনদের জিও ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকার কারণে বাঁধের নির্মাণকাজ ঠিকমতো এগোচ্ছে না। এদিকে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
তার অভিযোগের বিষয়ে উপস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (রামগতি পওর বিভাগ) এম এম জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, কাজটি সঠিকভাবেই দেখভাল করা হচ্ছে। তবে কোয়ালিটি নিশ্চিত করার কারণে কিছুটা সময় নষ্ট হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য বলেন, কাজ করছে ঠিকাদার, পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের পক্ষে তদারকি করবে। প্রকল্প সরকারের, টাকা সরকারের। আগে যে বাঁধগুলো হয়েছে, সেগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। সেগুলোর মান ভালো। এখনকার বাঁধগুলোও পানি উন্নয়ন বোর্ড তদারকি করবে।
এ সময় সংসদ সদস্য উপস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই কর্মকর্তাকে সঠিকভাবে তদারকি এবং বাঁধ নির্মাণের নির্দেশনা দেন। বলেন, সঠিকভাবে কাজ হলে বাঁধ টেকসই হবে এবং ভাঙা বন্ধ হবে।
বাঁধ নির্মাণের সার্বিক দিক নিয়ে এমপি আবদুল মান্নান জানান, এক প্যাকেজে এক কিলোমিটার। এক প্যাকেজে তিনটি লট। প্রত্যেক লটে ভিন্ন ভিন্ন টেন্ডার হয়। প্রতি টেন্ডারে সরকারের বাজেট ৩০ কোটি টাকা। মোট ৩১ কিলোমিটারে ৩৩টা প্যাকেজ, ৯৯টা লট, ৯৯টা টেন্ডার। ৪৬টি টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫৩টির মধ্যে ৩০টির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন আছে। বাকি ২২টির টেন্ডার এখনো হয়নি। এটা কমলনগরের নাছিরগঞ্জ এলাকা। সেখানে এখন ভাঙে না। দেরিতে হলেও সমস্যা নেই। যে এলাকা ভাঙে, সেটা আগে দিতে হবে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ৭৬টি লটের কাজ হবে।
এমপি বলেন, বাঁধ নির্মাণে সরকারের আন্তরিকতা আছে। এজন্য সরকার টাকাও ছাড় দিচ্ছে। অনেক জায়গায় সরকার এখন টাকাও দেয় না। এখানে দিচ্ছে, কারণ এটা খুব জরুরি।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর বড়খেরী, লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট বাজার’ তীররক্ষা প্রকল্প নামের ৩৩.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২০২১ সালের ১ জুন পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। গত ৯ জানুয়ারি কমলনগরে মাতাব্বর হাট এলাকায় দুটি লটের কাজ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
আরএ