ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ভৌতিক গর্ভপাত: চিকিৎসকের সংবাদ সম্মেলন, তদন্ত কমিটি 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
ভৌতিক গর্ভপাত: চিকিৎসকের সংবাদ সম্মেলন, তদন্ত কমিটি 

পাবনা: পাবনা শহরের শালগাড়িয়া মহল্লার হাসপাতাল সড়কের পাশে মডেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক অন্তঃসত্ত্বার সিজারিয়ান অরপারেশনের পর নবজাতক উধাও বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রসূতি স্ত্রী রোগ চিকিৎসক ও সার্জন ডা. শাহিন ফেরদৌস শানু।  

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনেসথেসিয়া চিকিৎসক আরিফুর ইসলাম, মডেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক সেলিম উদ্দিন ও রোগীর স্বামী নজরুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে ডাক্তার শাহিন ফেরদৌস শানু বলেন, ক্লিনিক থেকে আমাকে জানানো হয় আমার রোগী দাবি করে একজন এসেছেন জরুরিভাবে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হবে। আমি এসে দেখি রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। আমার কোনো ব্যবস্থাপত্র বা কাগজপত্র সেখানে নেই। এ অবস্থায় ডাক্তার হিসেবে রোগীর অবস্থা জরুরি দেখে তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করি। পেটের চামড়া কাটার পর বুঝতে পারি এই রোগীর পেটে কোনো বাচ্চা নেই। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর স্বামী নজরুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে তাকে সরাসরি দেখানো হয়।
তিনি আরও বলেন, মেডিকেলের ভাষায় এটা ফ্যানটম প্রেগনেন্সি বা ভৌতিক গর্ভধারণ। এমন রোগী খুব কম পাওয়া যায়। তাছাড়া রোগীর সঙ্গে যে ফাইল ছিল সেগুলো ২০১৭ সালের রোগীর প্রথম বাচ্চার কাগজপত্র। জরুরি সময়ে তারিখ দেখা হয়নি। দেখা হয়েছিল রিপোর্টের রেজাল্ট। এই বিষয়টি রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়সারা দায়িত্ব ও কর্তব্যের কারণে হয়েছে। নিতান্তই জরুরির কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে ভুল স্বীকার করেন। তবে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাচ্চা উধাও বা চুরি হয়েছে এমন খবর নানা গণমাধ্যমে এলেও এ তথ্য সঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত ও লজ্জিত। এদিকে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

অপরদিকে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, বাচ্চা উধাওয়ের বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার পাবনা মেডিকেল কলেজের (গাইনি ও অবস বিভাগ) সহকারী অধ্যাপক ডা. নার্গিস সুলাতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারী ভুক্তভোগী নারীর স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, আমাকে সিভিল সার্জন স্যার ডেকে পাঠিয়েছিলেন এই বিষয়ে আমার স্ত্রী পরীক্ষা নীরিক্ষা করার জন্য। বিজ্ঞান যদি বলে আমার স্ত্রীর পেটে কোনো বাচ্চা ছিল না সেটি আমাকে মেনে নিতে হবে। তবে আমি তিন তিন বার ডাক্তার আপাকে দেখিয়েছি আমার স্ত্রীকে। আমার প্রথম বাচ্চাও তার হাতে হয়েছে। তার চেম্বারের সবাই আমাকে ও আমার স্ত্রীকে চেনেন। দেড় মাস আগেও তার ওখানে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করিয়েছে সেখানে এমন কোনো কিছু ধরা পরেনি। সিজার করার সময় আমি দুইবার বলেছি সমস্যা হলে আমাকে বলেন অপারেশন বন্ধ করেন তারা সেটি করেনি। বাচ্চা না থাকলে পেটের মধ্যে আমার স্ত্রী যে সন্তানের বেদন অনুভবন করেছেন সেটি তা হলে কি। আমি প্রকৃত ঘটনার রহস্য জানতে চাই।

কোন তথ্য বা কাগজাদির ওপরে নির্ভর করে এই নারীর সিজারিয়ান করা হয়েছে সে বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে পাবনা মডেল হাসপাতালের পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ওই রোগী ডাক্তার শানু আপার কথা বলে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে ডাক্তার আপার সঙ্গে কথা বলি তিনি সময় দেন। দুপুরে ভর্তি হয়েছে রাতে সিজারিয়ান হয়। তার কাছে বর্তমান পরীক্ষা নীরিক্ষার কাগজ চাইলে তিনি দিতে পারেননি। তবে তার শারীরিক গঠন দেখে গর্ভবতী মনে হয়েছে। আপা এসে সিজারিয়ান করার পরে আমরা জানতে পারি তার পেটে কোনো বাচ্চা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আপনারা সবাই নেট সার্চ দিয়ে দেখেন এ ধরনের ফেক প্রেগন্যান্সি হয় কিনা। আমি পাবনার মানুষের জন্য সেবা দিয়েছি সবসময়, আর এখন আমাকে বিব্রত হতে হচ্ছে। আমাদের বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নজরদারির জন্য যাদের দায়িত্ব তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে হয়তো এমন পরিস্থিতিতে পরতে হত না। বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নিয়ম অনুসরণ করে শয্যা, চিকিৎসক, নার্স থাকার যে নিয়ম রয়েছে সেটি মানা হয় কতটুকু। অবশ্যই এই রোগীর ভর্তির পরে তার কাগজপত্র দেখে সব কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা করার দরকার ছিল। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি, রোগীর অবস্থা ভালো ছিল না। তার প্রেসার বেশি ছিল। শারীরিক এ অবস্থায় তাকে দ্রুত সিজারিয়ান করতে হয়েছে। চামরা কাটার পরে বুঝতে পারি তার পেটে বাচ্চা নেই। তাকে প্রাথমিক দুটি স্থানে প্রেগন্যান্সির দুটি টেস্ট করানো হয়েছে দুটি রিপোর্টের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। তবু আমাকে নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে।

** অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক জানালেন বাচ্চা নেই, ভৌতিক গর্ভপাত!

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।