ঢাকা: নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এই ব্যবসায় অনেকেই আমাকে সাহস জুগিয়েছিলেন।
কান্নারত অবস্থায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুরের জামালপুর ইউনিয়নের চটগাছিয়া গ্রামের অসহায় যুবক শহিদুল ইসলাম।
নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে শহিদুল বলেন, ২০০২ সালে বিএসসি পাশ করে এলাকার জনগণের সেবা করব বলে সাদুল্লাপুর থানা হাসপাতালে এক বছর পল্লী চিকিৎসকের ট্রেনিং করি। ট্রেনিং নেওয়ার পরপরই একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায়। অতিরিক্ত প্রেসার নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগছিলো না। নিজে কিছু করব বলে ২০১৫ সালের মার্চে অপসোনিন কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজারের পদ থেকে চাকরি ছেড়ে দেই। গ্রামের মানুষের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি মুরগী আর গরুর ফার্ম করার চিন্তা করি। নিজের সঙ্গে আরও ১০ জনের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গাইবান্ধায় কয়েকটি ফার্ম ভিজিট করে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করি। এক হাজার মুরগী নিয়ে শুরু করি পোলট্রি ফার্ম। ব্যবসা ভালোই চলছিল। লাভ দেখে দুই হাজার মুরগীর প্রডাকশনে যাই। ব্যবসায় প্রথম বছর ভালো লাভ হয়। লাভ দেখে ব্যবসা ধীরে ধীরে বড় করার চিন্তা করি। পাশাপাশি আরও দুই হাজার লেয়ার মুরগীর শেড তৈরি করি। মুরগীর সঙ্গে গরুর ফার্মও এগিয়ে চলে। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ব্যবসা ব্যাপক পরিসরে বড় হলেও দিনে দিনে আমার লসের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ব্যবসা বাড়ায় অনেকেই আমার কাছে আসেন পরামর্শ নিতে। তবে লসের পরিমাণ এতোটাই বেড়ে যায় যে, শেষ রক্ষা হয়নি। তিন হাজার মুরগীর প্রডাকশনে যাওয়ার আগে এক হাজার মুরগী কলেরায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপরও প্রডাকশন চালু থাকলেও বাজার ভালো না থাকায় প্রতিদিনই এক থেকে দুই হাজার টাকা লস হতে থাকে।
শহিদুল আরও বলেন, মুরগি ও গরুর খামার গড়ে তোলার পাশাপশি একটি নিজের ও একটি লিজ নিয়ে দুটি পুকুরে মাছ চাষও শুরু করি। সব কিছু নিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে ব্যবসায় ধস শুরু হয়। পোলট্রি খামারের কারণে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হতে থাকি আমি।
চোখের সামনে নিজের পতন দেখেছি উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা বলেন, প্রথম বছরে ব্যবসা ভালো দেখে বেশ কিছু কোম্পানি আমার সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। স্থানীয় বেশকিছু সমিতি থেকেও টাকা তুলে ব্যবসা করি। একই সঙ্গে আফতাব-এর মতো প্রতিষ্ঠান আমাকে ১২ লাখ টাকা লোন দেয়। পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে ফিডের ব্যবসাও শুরু করি।
অনেক ক্ষুদ্র খামারি তার কাছ থেকে ফিড ও বাচ্চা নিয়েছে। যাদের কাছে এখনো অনেক টাকাও পান উল্লেখ করে শহিদুল বলেন, বছরে ৬ থেকে ৭টি শেড করলেও এক দুটিতে লাভ হতো। বাকীগুলোতে লস হতে থাকে। ব্যবসায় যখন দাঁড়াতে পারছিলাম না। তখন ব্রাক, টিএমএসএস থেকে লোন করি। এতে বিপদ আরও বেড়ে যায়। টিকতে না পেরে সব বিক্রি করে দুই তিন মাস গা ঢাকা দেই। এতে দুটি কোম্পানি আমার নামে মামলা করে। এখন সেই মামলা কাঁধে নিয়ে ঘুরছি।
এখন নিজ জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন উল্লেখ করে ভুক্তভোগী শহিদুল বলেন, মাসে যে টাকা বেতন পাই, তা থেকে অল্প করে দেনা দিচ্ছি। তবে জানিনা এই জীবনে এই দেনা থেকে মুক্ত হতে পারব কি-না।
ভিটে বাড়ি বিক্রি করেও শেষ রক্ষা হবে না। তবে সমাজের কাছে আমার একটাই চাওয়া, যদি কোনো বিত্তবান আমার মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়ে আমাকে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ করে দেন, আমি ও আমার পরিবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারব বলে জানান অসহায় শহিদুল।
বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এসএমএকে/এনএস