ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মামা শ্বশুরের মোটরসাইকেল চুরি করে পালিয়েছিলেন আরাভ খান

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
মামা শ্বশুরের মোটরসাইকেল চুরি করে পালিয়েছিলেন আরাভ খান

মেহেরপুর: শ্বশুরবাড়ি এসে মামা শ্বশুরের মোটরসাইকেল চুরি করে পালিয়েছিলেন আরাভ খান। সোমবার বিকালে তার প্রথম স্ত্রী সুরাইয়া আক্তারের বাবা নজরুল ইসলাম এ অভিযোগ আনেন আরাভ খানের বিরুদ্ধে।

 

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন এমরান খান হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান এখন খবরের শিরোনামে। দেশে তিনি কি করতেন, কোথায় থাকতেন, কীভাবে দুবাই গেলেন ও এতো সম্পদশালী হয়ে উঠলেন দ্রুত সময়ে - এ নিয়ে চলছে অনুসন্ধান।  

এসব খবরের মধ্যেই জানা গেল, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে বিয়ে করেছিলেন আরাভ ওরফে রবিউল। কেয়াকে তখন আপন জুয়েলার্সের মালিক আপন নামে পরিচয় দেন আরাভ।  

সেদিনের সেই আপনকে নিয়ে যখন মিডিয়াতে হইচই তখন গাংনীতে এলাকার মানুষের মুখে মুখে চলছে নানা আলোচনা।

গাঁড়াডোব গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা সরোয়ার হোসেন টোকন বলেন, কেয়া ও তার স্বামী (আরাভ খান) গাঁড়াডোব গ্রামে এসেছিল। সে গাঁড়াডোব গ্রামে এসেই কয়েকদিন থাকার পর কেয়ার মামা মুকুল হোসেনের মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায় আপন ওরফে আরাভ। তারপর আর কোনোদিন এই গ্রামে আসেনি।

সোমবার বিকালে কেয়ার বাবা আবুল কালামের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজ২৪ প্রতিনিধির।

তিনি জানান, ঢাকার একটি বেসরকারি ম্যাটসে পড়ালেখাকালীন সময়ে আরাভ খানের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক ও পরে তারা বিয়ে করেন।

২০১৪ ও ১৫ সালে বিলাসবহুল গাড়িতে স্বামী আরাভ খান ওরফে আপনকে সঙ্গে নিয়ে কেয়া দুবার গাঁড়াডোব গ্রামে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তখন বিলাসবহুল গাড়ি দেখে গ্রামের লোকজন হতভম্ব হয়। সে সময় কেয়া জানিয়েছিল তার স্বামী আপন জুয়েলার্সের মালিক।  


তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়ে কেয়া ২০১৩ সালে এসএসসি পাশ করে। পরে আমার অমতেই তার মা ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজে ভর্তি করে দেন কেয়াকে। সেখানে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিপ্লোমা করতো কেয়া। তারপর থেকেই মেয়ের সাথে আর কোন যোগাযোগ নেই আমার।

তিনি বলেন, ঢাকায় ভর্তি হবার কিছুদিন পরই শুনতে পাই কেয়া আপন নামের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছে। ওই ছেলে নাকি আপন জুয়েলার্সের মালিক। ২০১৪ ও ১৫ সালে স্বামী আপনকে নিয়ে দুইবার গাড়াডোব গ্রামে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে আসেন দু’জনে। তখন বিলাসবহুল জীবন যাপন করতো তারা। পরে বিভিন্ন মারফত জানতে পারি জামাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। এরপরই কিছুদিন যেতে না যেতেই খবর আসে কেয়া একটি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। পরে জেলেও যেতে হয় কেয়াকে। পরে কেয়ার স্বামী আপন ওরফে আরাভ আমার মেয়েকে তালাক দেয়। দীর্ঘ কয়েক বছর হাজত বাস করার পর ২০২২ সালে জামিনে মুক্তি পায় কেয়া। পরে সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের ইদগাহ পাড়া এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহিন নামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় কেয়ার। তারপর পরই সে স্বামীর সাথে মালয়েশিয়ায় চলে যায়।

ওই গ্রামের সান্তনা নামের এক নারী জানালেন, কেয়ার স্বামীকে দেখে গ্রামের সবাই হতবাক হয়েছিল। তার স্বামী দেখতে সুদর্শন। এছাড়া ধনীলোক। সবাই তাকে (কেয়াকে) বাহবা দিয়েছিল, এমন সুন্দর ও বড়লোক জামায়ের জন্য।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কয়েকদিন আগে ডিএমপি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) থেকে সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়ার নামে একটি চিঠি গাংনী থানাকে দিয়েছে। আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। সুরাইয়া ওরফে কেয়া এখন তার দ্বিতীয় স্বামী শাহিনকে নিয়ে মালেশিয়াতে অবস্থান করছেন।

এদিকে পুলিশী আতংকে এখন শাহিনের পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন। বিকালের দিকে তাদের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ঢাকার পুলিশ পরিদর্শক মো. মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর সুরাইয়া আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন।

দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ওরফে আরাভ খানও এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।