ঢাকা: রাজধানীতে সমাবেশ করতে হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একই শর্ত মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, রাস্তায় কোনো ঝামেলা করা যাবে না, জনদুর্ভোগ করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
শুক্রবার বড় দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে কি না, আর যদি থেকে থাকে, তাহলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় বলি রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি পালন করতে সরকারিভাবে কোনো বাধা নেই। তারা যেন নিয়ম-শৃঙ্খলা ও আইন মেনে চলে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে, সেই আহ্বান রাখব। তারা কোনো ধ্বংসাত্মক কাজে যেন লিপ্ত না হয়, জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে। সেজন্যই আমি বলেছি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করবে, এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তারা যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কিংবা জানমালের ক্ষতি, ভাঙচুর করে, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়, শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, তখন আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যে কাজ বা অর্পিত দায়িত্ব, সেটা তারা পালন করবে।
তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এখন সুদক্ষ, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে একটা সুন্দর জায়গায় আনার জন্য সবসময় তারা সহযোগিতা করছে। প্রধানমন্ত্রী দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে উন্নয়নের রোল মডেল তৈরি করেছেন। সেজন্য জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করতে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সবসময় কাজ করছে। আমরা সে কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাইব। তারা যেন জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে, রাস্তায় চলাচল বন্ধ না করে, কোনো রকমের ভাঙচুরে লিপ্ত না হয়। আমরা সেই আহ্বান রাখব আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের কোথাও কোনো বাধা নেই। আজ বিএনপি সমাবেশ করতে চেয়েছিল, আমরা বলেছি কোনোক্রমেই রাস্তার মধ্যে সমাবেশ করতে দেব না। তারা সেটা সরিয়ে নিয়ে আগামীকাল করবে বলে জানিয়েছে। সেটাও আমরা বলব রাস্তা পরিহার করে করার জন্য। তারা যেন জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে। যদি জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাজ করবে। যে দলই করবে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবে, এটিই আমাদের মূল কথা।
আপনি বলেছেন রাস্তায় সমাবেশ করলে জনদুর্ভোগ হয়। তাহলে রাস্তায় সমাবেশ করতে দিচ্ছেন কেন, বন্ধ করছেন না কেন? আজ আওয়ামী লীগের সমাবেশ, কাল বিএনপির সমাবেশ, এভাবে দিলে তো জনদুর্ভোগ হতো না। কেন এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এখানে আমার তেমন কিছু বলার নেই। যারা রাজনৈতিক নেতা তাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি তো হোম মিনিস্টার কাজেই আমার কাছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করবেন। আর এই প্রশ্নটা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করুন। আমরা যখন পারমিশন দিই, তখন জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সে কথাটা বলে দেই। তাদের কর্তব্যটা কী, তা জানিয়ে দিই। আমরা সব সময় কিছু শর্ত দিয়ে দিই যে, তারা কী করতে পারবে, আর কী করতে পারবে না। তারা যদি সেগুলো পূরণ করতে না পারে, তখন আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
দুই দলের প্রোগ্রাম কাছাকাছি হয়ে যাওয়ায় সহিংসতার কোনো শঙ্কা আছে কি না বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবসময় পুলিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করছি, তারা যেন সভা-সমাবেশের জন্য রাস্তাগুলো বর্জন করে। তারপরও তারা যদি করে, তাহলে আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন সহিংসতায় না যায়।
বিএনপি শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশের করবে এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, তারাও দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবেন, এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা শুনেছি, এটা নিয়ে বসবো। তারা এটা যদি করে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা কিছু শর্ত দিয়ে দেব। শর্তে বলা থাকবে, তারা কীভাবে সমাবেশ করবে এবং তারা কী করতে পারবে না। দুই দলের জন্য একই নির্দেশনা থাকবে। এখন পর্যন্ত কাউকে অনুমতি দিইনি। আমাদের কমিশনার এখন বসবেন। মেট্রোপলিটনের যে পুলিশ কমিশনার, তিনি এটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তিনি বসে সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন।
তাহলে কি রাস্তায় ঝামেলা ঘটতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা আপনারা জানেন। কারণ আপনাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সবসময় প্রস্তুত আছে। যদি ঝামেলা করে তাহলে তাদের ওপর অর্পিত তারা দায়িত্ব পালন করবে।
ডিএমপি কমিশনার গতকাল বলেছেন, রাজপথে কোনো দলকেই সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার বার্তা হলো, রাজপথে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোনো জায়গায় কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আমরা সবসময় মানা করে আসছি। এটা আমাদের সবসময় অনুরোধ থাকবে এবং আমরা অনুরোধ করছি। তারপরও কোন দল যদি করে, তারা রিস্ক নিয়ে করবে।
কোন দল কোথায় সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি জানি না কারা কোথায় সমাবেশ করছে। আমরা অফিসিয়ালি এখনও বলি মাঠে করতে। মাঠে যদি করতে পারা না যায়, যদি কোনো অসুবিধা থাকে, পরবর্তী সিদ্ধান্তে তারা যেটা করবে, আমরা তা বিবেচনা করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
জিসিজি/আরএইচ