ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাণিজ্যিকভাবে গাড়ল পালনে লাভবান খামারিরা

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৩
বাণিজ্যিকভাবে গাড়ল পালনে লাভবান খামারিরা

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে উন্নত জাতের গাড়ল পালন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে এ জেলার গাড়ল।

গাড়ল পালন করে ভাগ্য বদলেছে অনেক খামারির। গোশতের চাহিদা ও বাজারে ভালো দাম পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।

দেখতে হুবহু ভেড়ার মতই। এদের জীবনচক্রও একই রকমের। তবে ভেড়ার চেয়ে আকারে বেশ বড় ও মাংসের পরিমাণও কয়েকগুণ বেশি গাড়লের। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে গাড়লের খামার।

জানা গেছে, ভেড়া গোত্রীয় এই গাড়লের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে সারাদেশ জুড়ে। রাজবাড়ী জেলার খামারিদের কাছ থেকে গাড়লের বাচ্চা কিনে নিয়ে নতুন নতুন খামার গড়ে তুলছেন দেশের অনেক জেলার খামারিরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উদ্যোক্তারা খামার থেকেই বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

খামারিরা জানিয়েছেন, আকার ও আকৃতিভেদে ছয় মাস বয়সে গাড়লের প্রতিটি বাচ্চা চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি গাড়লের খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার গাড়লের বাচ্চা উৎপাদন হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার যতগুলো খামার রয়েছে তার বেশিরভাগ থেকেই বাচ্চা উৎপাদন মূল লক্ষ্য। মাংস বিক্রির উপযুক্ত গাড়লের চেয়ে বাচ্চা বিক্রি বেশি লাভজনক। জেলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জের পশু হাটে গাড়ল বিক্রি হয়ে থাকে। তবে গাড়লের বাচ্চা বিক্রি হয় খামার থেকেই। এতে খামারিরা স্বচ্ছন্দবোধ করেন।

রাজবাড়ী জেলা সদরের বসন্তপুুর ইউনিয়নের গাবলা গ্রামের খামারি মো. ইসমাইল (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, আগে ছাগল পালন করতাম। পরে ইউটিউবে দেখেছি গাড়ল পালন অধিক লাভজনক। চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ৬০টি গাড়ল কিনে আনি। এখানে এক বিঘা জমিতে ঘর তৈরি করে গারল পালন শুরু করি ২০২১ সালের শেষের দিকে। এ পর্যন্ত ৪০টি গাড়ল আমি বিক্রি করেছি।

তিনি আরও বলেন, গাড়ল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবারে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা প্রসব করে মা গাড়ল। দেশীয় ভেড়ার চেয়ে গাড়ল আকারে প্রায় দ্বিগুণ। যেখানে দেশীয় একটি ভেড়ার ২০ থেকে ২৫ কেজি মাংস হয় সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি গাড়লের ৩৫ থেকে ৫০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। গাড়লের দামও বেশি এবং এর মাংস খেতে সুস্বাদু। খাবার, ঘর ও পালন পদ্ধতি দেশীয় ভেড়ার মতই।

আরেক খামারি মো. আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মানুষ খামার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন গাড়লের বাচ্চা। ছয় মাসের দুধ ছেড়েছে এমন বাচ্চা চার থেকে ছয় হাজার এবং প্রাপ্তবয়স্ক ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি।

আরেক গাড়ল পালনকারী যুবক মো. বছির বলেন, গাড়ল ভেড়ার চেয়ে আকারে বড় এবং লেজও অনেক বড়। গাড়ল সাধারণত কাঁচা ঘাস, গাছের পাতা, বিচুলি, ভুসি, খৈলসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে। ভেড়ার মতো গাড়লও একে ওপরের অনুসরণ করে চলে। এ জন্য গাড়ল পালন করা অনেক সহজ। তবে পুরুষ গাড়ল শান্তশিষ্ট দেখা গেলেও রাগি প্রকৃতির। সুযোগ পেলে মাথা দিয়ে আঘাত করে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গাড়ল সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। এদের রোগব্যাধি অনেক কম। এ জন্য গাড়ল পালন সহজ। প্রতি ৭ মাস পর পর গাড়ল বাচ্চা দেয়। চার থেকে পাঁচ মাসের একটি গাড়লের বাচ্চার দাম ছয় থেকে আট হাজার টাকা। মাদি গাড়ল বিক্রি হয় প্রতিটি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায়।  

তিনি আরও বলেন, গর্ভবতী গাড়ল বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। পাঠা গাড়ল বিক্রি হয় প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। গাড়লের মাংস ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গাড়লের মাংস সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা বেশি। পূর্ণ বয়স্ক গাড়লের ওজন ৫৫ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।