ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অপেক্ষার অবসান হচ্ছে শিবচরবাসীর

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
অপেক্ষার অবসান হচ্ছে শিবচরবাসীর

মাদারীপুর: মাদারীপুরের শিবচর থেকে ট্রেনে করে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছানোর অপেক্ষার অবসান হচ্ছে শিগগিরই।  

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে শিবচরের স্টেশনে এসে থামবে ট্রায়াল ট্রেন।

সেখান থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাবে ট্রেনটি। অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে এটাই সার্বিক প্রস্তুতিমূলক যাত্রা। ট্রায়াল ট্রেনে ঢাকা স্টেশন থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এমপিসহ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে রেল চালু হওয়া নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই পদ্মাপাড়ের মানুষের। রেল চালু হলে সময় ও টাকা দুটোই বাঁচবে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতে। আর এতে করে তৃণমূলের সাধারণ মানুষ লাভবান হবেন বলে প্রত্যাশা।

তাদের প্রত্যাশা, রেল চালু হলে রাজধানী ঢাকা যাওয়া-আসায় সময়ও যেমন কম ব্যয় হবে, তেমনি খরচও কমবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা-রাজশাহী সহজে ও স্বল্প খরচে যাওয়া-আসা করতে পারবেন।

আলাপকালে স্থানীয়রা জানান, ‘রেল যোগাযোগ নিঃসন্দেহেই যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি অন্যতম দিক। স্বল্প খরচে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলে রেলের বিকল্প নেই। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন শেষ পর্যায়ে রেল লাইনের কাজ। অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী রেল চলাচল উদ্বোধন করবেন বলে জানতে পেরেছি। রেল চালু হলে ঢাকার সঙ্গে পদ্মা সেতু হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত সহজেই যাতায়াত করতে পারবে এই অঞ্চলের মানুষেরা। আর রেল চালু হলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পণ্য পরিবহন আরও সহজ হয়ে যাবে। কমবে খরচও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ৪ এপ্রিল পদ্মা সেতুতে প্রথম ট্রেন চলাচলের পরীক্ষামূলক যাত্রা সম্পন্ন হয়। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে দুপুর ১টা ২১ মিনিটে পদ্মা সেতু অভিমুখে যাত্রা শুরু করে সাত বগির একটি বিশেষ ট্রেন। ভাঙ্গা স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে শিবচরের দুটি স্টেশন হয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে মাওয়া স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় ট্রেনটি। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথ দুই ঘণ্টায় অতিক্রম করে ট্রেনটি। ত্রিশ কিলোমিটার গতিতে চলে ২টা ৪৩ মিনিটে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ওঠে স্বপ্নের ট্রেন। এবার বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টেশন থেকে সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে আসবে ট্রায়াল ট্রেন। পথে মাওয়া ও শিবচর স্ট্রেশনে থামবে ট্রেনটি।

রাজধানী ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলসংযোগ প্রকল্পের রেলপথে ৩২টি কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস, ১৩টি রেল সেতু রয়েছে। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলপথে পাথরবিহীন রেলপথ রয়েছে ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার ও ২৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার রয়েছে পাথরযুক্ত। এই রেলপথে ১টি জংশন ও ৪টি স্টেশন রয়েছে।  

শিবচরের পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা মো. রাসেল আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর পর রেলপথ নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে আমাদের। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষেরা অল্প খরচে ট্রেনে চড়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবে। পদ্মা সেতু চালুর ফলে ঢাকা যেমন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, তেমনি রেল চালু হলে ঢাকা যেতে খরচ আরও কমে যাবে। যানজট এড়িয়ে ঢাকার মধ্যে চলে যাওয়া যাবে। এতে করে শিবচরের প্রান্তিক অঞ্চলেও ব্যবসায়-বাণিজ্যেও প্রসার ঘটবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। ’

স্থানীয় শিক্ষক আব্বাস আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর এক বছরে আমাদের অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই এক বছরের মধ্যেই রেলচালুর দ্বারপ্রান্তে এখন। রেল চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় পরিবর্তন চোখে পড়বে!’

প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ আশা জাগিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। পদ্মা পার হওয়ার অবর্ণনীয় দুর্ভোগের অবসান ঘটে গত বছরের ২৫ জুন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটলে জীবনযাত্রার মানও বাড়ে, পরিবর্তন ঘটে। সড়কপথের এই যোগাযোগের পর পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ নতুন স্বপ্নের সঞ্চার ঘটাচ্ছে! রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো ধীরে ধীরে রেল সংযোগের আওতায় আসবে। আর এই রেল যোগাযোগ সাধারণ মানুষের জীবন-যাত্রায় আরও পরিবর্তন আনবে। গ্রাম পর্যায়ে বাড়বে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার এবং উন্নয়ন' এমনটাই আশা করেন প্রান্তিক মানুষেরা। সেই আশা নিয়েই রেল চলাচল উদ্বোধনের অপেক্ষায় দিন গুনছেন এই অঞ্চলের মানুষেরা!

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।