ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাবেন। একইসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরবেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান মন্ত্রী।

মোমেন জানান, ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। এ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবে।  

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দিতে পারেন। তিনি নিজের বক্তব্যে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করবেন।  

পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসবে। পাশাপাশি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সাধারণ বিতর্ক পর্ব চলাকালীন বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করতে পারেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  

মোমেন জানান, কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ অর্জনে যে অগ্রযাত্রা- তা অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে সম্মিলিতভাবে টেকসই বিনির্মাণ এবং সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকল্পে এবারের আয়োজনে বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের সভা আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী অংশ নিতে পারেন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের সভা, যেমন- জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে আরও কিছু সভায় অংশ নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এসব সভা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এসব সভায় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানাবেন।  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করেছি। কিন্তু এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিকভাবে নেওয়া পদক্ষেপ আশানুরূপ কোনো সমাধান দিতে পারেনি। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর অগ্রাধিকার ইস্যু। এই বক্তব্যই আবারও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে একটি  সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিতে পারেন।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে রোলমডেল হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। এবারের আয়োজনেও  প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একাধিক সভায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের অর্জন এবং প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন।  

মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে পারেন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সেসব দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যায় (মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি)।  

সফর চলাকালীন জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার প্রধানরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যাবিষয়ক উপদেষ্টা, সদ্য নির্বাচিত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক।

মোমেন বলেন, এবারের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে, যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিহার করে চলমান খাদ্য ও জ্বালানি সংকট নিরসন, আর্থিক অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা, বিশ্বশান্তি, বহুপাক্ষিকতাবাদ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন প্রভৃতি বিষয়ে এবারের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। উপরন্তু, অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং এর স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের বিষয়টিও ব্যাপকভাবে আলোচিত হবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে সহায়ক হবে।  

তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করবে এবং বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে আশা করা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
টিআর/আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।