জামালপুর: জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অজ্ঞাত কারণে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছু শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেলেও কেউ কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার বিষয়ে চিকিৎসক বলছেন, শিক্ষার্থীরা শ্বাস কষ্টের কথা বললেও তাদের শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি আমরা পাইনি। তবে কেন এমন হয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও জানা যায়নি।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. বদরুল আমিন।
এর আগে, রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার চাইল্ড কেয়ার একাডেমিক স্কুলে রাত্রিকালীন কোচিং এ ঘটনা ঘটে।
অসুস্থরা হলেন-উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় এলাকার তোজাম্মেলের মেয়ে মেঘলা, টুকন মিয়ার মেয়ে তমা, আমিনুল ইসলামের মেয়ে তর্জনী, শফিকুল ইসলামের মেয়ে চৈতি, আল আমিনের মেয়ে আশা, আব্দুল খালেকের মেয়ে নাদিয়া, সুরুজ্জামানের মেয়ে স্বর্ণা, লাভলু মিয়ার মেয়ে লাবণ্য, এছাড়াও জান্নাতুন ফেরদৌস, তানিয়া। তারা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা এবং ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয় ও অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, বিকেল চারটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানে কোচিং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকে। প্রতিদিনের মতো রোববার বিকেলে শিক্ষার্থীরা কোচিং এ যায়। কোচিং শেষে একজন শিক্ষার্থী পানি পান করতে গেলে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা শুরু হয়। তার সঙ্গে একে একে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ৯ জন শিক্ষার্থীকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকিদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চাইল্ড কেয়ার একাডেমিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কামরুজ্জামান লিটনও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার মোবাইলে কল করা হলে তার স্ত্রী কল্পনা আক্তার রিসিভ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি হাসপাতালে রয়েছি। তিনি (কামরুজ্জামান) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ডাক্তার বলছে তার হার্টের সমস্যা।
শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. বদরুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা কোচিং শেষে বাড়ি ফেরার সময় কোনো এক টিউবওয়েল থেকে কয়েকজন পানি পান করেছে। তারপর থেকেই এই শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে আমাদের হাসপাতালে আশা শুরু করে। আমরা মাঠের স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে সেই টিউবওয়েলটি সিলগালা করেছি।
তিনি বলেন, রোববার রাতে প্রথমে আমাদের হাসপাতালে ৯ জন শিক্ষার্থী আসে। তারা বলেছে তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে তাদের স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর আজ তাদের ভেতরই তিনজন একই সমস্যার কথা বলে হাসপাতালে আসে। তার পরে আরও ৬ জন শিক্ষার্থী আসে। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা অক্সিজেনসহ শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে৷ এদের ভেতর দুইজন এখনও হাসপাতালে রয়েছে। বাকিরা বাড়ি চলে গেছে। সব মিলিয়ে মোট ১৫ শিক্ষার্থী আমাদের হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের কথা বলে চিকিৎসা নিতে আসে। এছাড়া ময়মনসিংহসহ জামালপুর হাসপাতালে কয়েকজন শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন রয়েছে৷
অসুস্থ হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত ছিল। তারা বলছিল তাদের বুকে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে শ্বাস নিতে পারছে না। তবে আমরা সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি তাদের ফুসফুসসহ শরীরের সব অঙ্গ স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত গরম, আবদ্ধ কক্ষে একসঙ্গে অনেকে থাকা, আতঙ্কিত হওয়ায় এবং সাইকোলজিক্যাল ট্রমাটাইজের মতো কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩
এসএফ/আরএ