সিরাজগঞ্জ: ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসবে মেতে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ।
মাহাতো সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় পালন করছেন তাদের প্রাণের উৎসব কারাম।
কারাম উৎসব উদ্বোধন করেন তাড়াশ উপজেলা আদিবাসী বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ উঁড়াও।
সাঁওতাল, উঁরাও, মাহাতো, বড়াইক, কুর্মি, সিং, পাহান, মাহালিসহ আরও কতিপয় আদিবাসী তাদের নিজ নিজ রীতিতে এ উৎসব উদ্যাপন করেন।
কারাম নামের গাছের ডাল কেটে প্রাচীন প্রথা মান্য করে এ উৎসব করা হয়, তাই এর নাম কারাম উৎসব। ডাল পুঁতে পূজা করা হয় বলে এটি কোথাও কোথাও ডাল পূজো নামেও পরিচিত। ‘গিঁইরালাই ভাদারআ মাসঅ, লাগালাই কারাম কেএ আঁস’, -এর অর্থ হলো ‘পড়েছে ভাদ্র মাস, মনে কারাম উৎসবের আশা জেগেছে। ’
আদিবাসীরা কারাম উৎসব ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীতে পালন করে থাকেন। খোলা মাঠে বা বাড়ির উঠানে কারাম গাছের ডাল পুঁতে তাতে নানা ধরনের ফুল বেঁধে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিনব্যাপী চলবে এ পার্বণ। আর এতে অংশ নিচ্ছেন শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষ।
আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রভাষ মাহাতো জানান, কারাম উৎসবে মূলত বীজের অঙ্কুরোদগম, বীজ থেকে চারা তৈরি, সন্তান স্নেহে লালন-পালন ও সংরক্ষণ প্রতীকী অর্থে প্রকৃতিকেই বন্দনা করা হয়। বিভিন্নরকম আচার ও গীতের মাধ্যমে জাঁওয়া তোলা হয়।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কেরমেতিরা (যারা পূজায় অংশ নেন) সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় কারাম ডাল পুঁতে শাপলা ফুল, শশা, ফিতা প্রভৃতি দিয়ে সাঁজিয়ে, ডালের গোড়ায় ডালাগুলো রেখে জ্বলন্ত প্রদীপ ও বরণ ডালা সজ্জিত কাঁসার থালা নিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকে লালন করে পূজায় মনোনিবেশ করে। পরে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ঐতিহ্যবাহী ঝুমুর নাচে মেতে ওঠেন তারা।
আদিবাসী মাহাতো সম্প্রদায়ের কারাম উৎসব সম্পর্কে কারাম উপন্যাসের লেখক আদিবাসী গবেষক উজ্জ্বল মাহাতো বলেন, সাধারণত সমতলের আদিবাসীরা নানা প্রথা ও ধর্মীয় আচরণের মাধ্যমে কারাম উৎসব পালন করে থাকেন। তবে বর্তমানে কারাম গাছটির সংকট দেখা দিয়েছে। এই গাছটিকে যদি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা না হয়, তবে আগামীদিনে আমাদের কারাম উৎসবের ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
এসআরএস