ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

উদীচী হত্যাযজ্ঞের আড়াই দশক: আদালতে ঝুলে আছে বিচারকাজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৪
উদীচী হত্যাযজ্ঞের আড়াই দশক: আদালতে ঝুলে আছে বিচারকাজ

যশোর: যশোরে আড়াই দশক আগে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘাতকরা আজও শনাক্ত হলো না। দীর্ঘ ২৫ বছরেও দেশের প্রথম জঙ্গি হামলার এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।

গত ১৪ বছর ধরে উচ্চ আদালতে আপিল শুনানিতে ঝুলে আছে মামলার বিচারিক কার্যক্রম। শুনানি শেষে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম কবে শুরু হবে তা জানে না কেউ। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতি বছরই বলছেন, তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন মামলাটির কার্যক্রম শুরু করার। এমনই পরিস্থিতিতে বুধবার (৬ মার্চ) নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ২৫তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ৬ মার্চ যশোর হত্যাকাণ্ড দিবস হিসেবে নানা কর্মসূচিতে পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিকেলে ’বিচারহীনতার ২৫ বছর’ শিরোনামে মতবিনিময় সভা করা হয়। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী যশোর জেলা সংসদ নিজস্ব কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন উদীচীর সভাপতি তন্দ্রা ভট্টাচার্য।

সভায় মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি আবদুল আফফান ভিক্টর। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে বেশ কিছু ঘটনার বিচার হলেও যশোর হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। বিচার করতে না পানা রাষ্ট্রের একটি দুর্বলতা। সেই দুর্বলতার সুযোগেই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো তাদের বিস্তার ঘটিয়েছে। ২৫ বছর ধরে যে বিচারহীনতার আবর্তে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি তা পেছনে ফেলে পুনরায় ঘটনার সঠিক তদন্ত করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা ও বিচার করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ’

বক্তারা বলেন, ‘উদীচীর হামলার মধ্যে দিয়েই সমগ্র বাংলাদেশ প্রথম প্রত্যক্ষ করে কী ভয়াবহ নৃশংসতায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি গ্রাস করতে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলা চালানোর পরই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর একের পর এক বোমা হামলা চালাতে থাকে। এসব কিছু হামলার বিচার হয়েছে। কিন্তু যশোরের হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। ’

তারা বলেন, ২৫ বছর ধরে সহযোদ্ধা হারানোর বেদনা বুকে চেপে উদীচী তার আদর্শিক সাংস্কৃতিক লড়াই বাস্তবায়নে পথে হাঁটছে।  

বক্তারা নতুনভাবে এই মামলা তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে বিচারহীনতার আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানান।

বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোরের সভাপতি হারুন অর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক সাজেদ রহমান বকুল, যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচআর তুহিন, উদীচী যশোরের সহ-সভাপতি অ্যাড. আমিনুর রহমান হীরু, উলাসী সৃজনী সংঘের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আজিজুল হক মনি, প্রেসক্লাব যশোরের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, প্রণব দাস, বিবর্তন যশোরের সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল প্রমুখ।  

সঞ্চালনা করেন উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব। স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্য সচিব আসিফ নিপ্পন।

এদিকে উদীচী ট্র্যাজেডির ২৫ বছর উপলক্ষে বুধবার বিকেলে টাউন হল মাঠে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রতিবাদী মিছিল, আলোচনা সভা ও মশাল প্রজ্বালন করা হবে।

যা ঘটেছিল
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে শক্তিশালী দুটি বোমা হামলা চালানো হয়। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ আহত হন।  

নিহতরা হলেন, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, নূর ইসলাম, ইলিয়াস মুন্সী, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম মিলন, মোহাম্মদ বুলু, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম পিন্টু ও বাবু রামকৃষ্ণ।

উদীচী ট্র্যাজেডিতে আহত সুকান্ত দাস বলেন, ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারর আমলে। পরবর্তীতে সেই আওয়ামী লীগ আরও তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু দুই যুগেও হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে।  

তিনি আরও বলন, প্রতি বছর ৬ মার্চ আসলে আমরা স্মরণ করি, বিচার দাবি করি। এভাবে ২৫ বছর পার হয় গেল। আর কতদিন এভাবে বিচার চাইতে হবে জানি না।

মামলার বর্তমান অবস্থা
ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল। তবে তদন্ত সংস্থার ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশারের মানুষ। এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি তাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী (পিপি) এম ইদ্রীস আলী বলেন, উদীচী হত্যা মামলাটির বিষয়ে রাষ্ট্র উচ্চ আদালতে আপিল করলে আসামিদের নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আসামিরা নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছে। এখন রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। আদালত আশ্বাস দিয়েছিলেন মামলাটি যাতে দ্রুত শুনানি হয়, সেই পদক্ষেপ নেবেন। তবে এখনো শুনানি শুরু হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৪
ইউজি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।